কঠোর বিধিনিষেধের লকডাউনের কারণে শিল্পকারখানাগুলোতে খাদ্যপণ্য উৎপাদন না হলে বাজারে সংকট হবে এবং পণ্যসামগ্রীর দামও বাড়বে বলে মনে করেন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠনের এই নেতা বলেন, কোরবানির পর ট্যানারি কারখানা এবং ওষুধশিল্পের কী হবে, তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বন্দর বন্ধ থাকলে ভয়াবহ হবে কনটেইনার জট। শুধু তৈরি পোশাকশিল্পেই প্রতিদিন ক্ষতি হবে ৮৬ লাখ মার্কিন ডলার। শুধু তাই নয়, আমরা পোশাকপণ্যের রপ্তানি বাজার হারাব। নীতি-নির্ধারকদের মনে রাখতে হবে- ক্রেতারা শীতকালীন পোশাকের ক্রয়াদেশ দেন আগস্টে। আর এখনই কারখানা বন্ধ রাখলে ক্রেতারা অন্য দেশে চলে যাবেন। এই ক্ষতির দায় নেবে কে?
গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেছেন, দেশের উৎপাদনশীল সব শিল্পকারখানা কভিডজনিত বিধিনিষেধের বাইরে রেখে সচল রাখতে হবে। বর্তমান কভিড পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষাকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হলে খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে সবাই বঞ্চিত হবেন। তিনি বলেন, কভিড বিস্তার রোধে জারিকৃত বিধিনিষেধ সংক্রান্ত সার্কুলারে ওষুধ কারখানার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। যদি ওষুধ কারখানা বন্ধ রাখা হয়, তবে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। অন্যদিকে ট্যানারি কারখানা বন্ধ রাখা হলে কোরবানি ঈদে সংগৃহীত চামড়া সংরক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, সব প্রকার শিল্পকারখানা বন্ধ রাখা হলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রাণশক্তি উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এবং সাপ্লাই চেইন (সরবরাহ ব্যবস্থা) সম্পূর্ণভাবে বিঘিœত হবে। এতে উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রী, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বোতলজাত পানীয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ইত্যাদি উৎপাদন বন্ধ থাকলে ভোক্তা সাধারণ সমস্যার সম্মুখীন হবেন। পণ্যসামগ্রী সঠিকভাবে সরবরাহ ও বাজারজাত না হলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এতে স্বল্প আয়ের ক্রেতারা ভোগান্তির শিকার হবেন। এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, রপ্তানি খাতের উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ থাকলে সময়মতো পরবর্তী রপ্তানি অর্ডার অনুযায়ী সাপ্লাই দেওয়া সম্ভব হবে না। এতে রপ্তানি অর্ডার বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখ্য, ঈদের ছুটিসহ প্রায় ১৮-২০ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে এক অনিশ্চয়তার মাঝে লেইট সামার, ক্রিসমাস ও বড়দিন এবং আগামী শীতের কার্যাদেশসমূহ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এক মাসের রপ্তানি শিডিউল বিঘিœত হলে পরবর্তী ছয় মাসের রপ্তানি শিডিউলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে উৎপাদন বন্ধ থাকলে আমদানিকৃত কাঁচামাল অব্যবহৃত হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে আমদানিকারক ও উৎপাদক উভয়ই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও ছোট কারখানাসমূহ বন্ধ রাখা হলে উদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং কারখানাসমূহ পুনরায় চালু রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।