ছেলে ১২ বছরের আরিয়ানকে নিয়ে গরু কিনতে ধানমন্ডি থেকে গাবতলী হাটে এসেছেন মো. শাহজাহান আলী। গতকাল বিকালে এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, হাটে প্রচুর গরু। ক্রেতা কম তবুও বিক্রেতারা দাম ছাড়ছে না। ৯০ হাজার টাকায় একটা গরু কিনেছি। যদিও ৭০ হাজারের ওপরে দাম হওয়ার কথা না। এবার গরুর দাম অনেক বেশি।
গাবতলী হাট ঘুরে দেখা যায়, গরুতে হাট ভরা। ক্রেতা কম। যারা এসেছেন তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে আসা গরু-ছাগল হাটে তোলা হয়েছে। এখানে রয়েছে ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের গরু। অনেক ব্যাপারী ১০ থেকে ১০০ গরু হাটে এনেছেন। অনেকে আবার নিজের লালন-পালন করা পশু বিক্রির জন্য এনেছেন। বাজারের মূল আকর্ষণ হচ্ছে বড় গরু। কিন্তু সেদিকে ক্রেতারা খুব একটা ভিড় করছেন না। ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর প্রতি আগ্রহ বেশি।
মেহেরপুর থেকে গাবতলী পশুর হাটে গরু নিয়ে আসা আমজাদ ব্যাপারী বলেন, এবার ছয়টি গরু এনেছি। এর মধ্যে দুটি বিক্রি হয়ে গেছে। দাম মোটামুটি পেয়েছি, তবে প্রত্যাশা আরও একটু বেশি ছিল। বাকিগুলোতে প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে আশা করছি।হাট ঘুরে দেখা যায়, বড় গরুর তুলনায় মাঝারি আকারের গরু বেশি। এ ছাড়া গরুর পাশাপাশি ছাগলও উঠেছে বেশ। ছাগল ব্যবসায়ীরা জানান, ৮ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে মোটামুটি ভালো জাতের ছাগল পাওয়া যাবে। তবে এর থেকে বেশি দামের ছাগলও হাটে আছে।
এদিকে হাটের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা জারি করেছে, কাউকে তা মানতে দেখা যায়নি। দেখা যায়, হাটে ঘোরাঘুরি করা গরু ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাসাধারণের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। হাটের প্রবেশমুখে বসানো হয়নি জীবাণুনাশক টানেল। হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পৃথক গেট তৈরির নির্দেশনা থাকলেও প্রায় সবাই একই গেট দিয়ে প্রবেশ ও বের হতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধিতে বলা হয়েছে, একটি পশু থেকে আরেকটি পশু এমন দূরত্বে বাঁধতে হবে, যাতে ক্রেতা ৩ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে পশু কিনতে পারেন, কিন্তু মানা হয়নি। হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় ৩ ফুট দূরত্ব রেখে লাইনে দাঁড়ানোর কথা থাকলেও গতকাল এসব বিধি মানতে দেখা যায়নি। গাবতলী গরুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, এই হাটে ৭০ হাজার গরু রাখার ব্যবস্থা করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কঠোর পরিচালনা কমিটি রয়েছে। শুধু গাবতলী হাট নয়, আফতাবনগর ইস্টার্ন হাউজিং, শাহজানপুর, মেরাদিয়া, বসিলা, গোপীবাগ বালুর মাঠ, দনিয়া কলেজ মাঠ, ধূপখোলাসহ অধিকাংশ হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে প্রায় একই চিত্র দেখা যায়।
আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানীতে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। প্রথম দিন হাটগুলোতে প্রচুর পশু বিশেষ করে গরু দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, ব্যাপারীরা পশুর দাম অনেক বেশি চাইছেন। একটু সময় নিয়ে পশু কিনবেন। ব্যাপারীরা বলছেন, পশুর খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবং যাতায়াত খরচের কারণে এবার পশুর দাম একটু বেশি।
মেরাদিয়া হাটের ২ নম্বর হাসিল ঘরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সওগাত হোসেন বলেন, দুপুর পর্যন্ত এ ঘরে ২২টি গরু হাসিল হয়েছে। তিনি বলেন, রাজধানীতে সবার পশু রাখার জায়গা নেই এ জন্য ঈদের দুই দিন আগে হাট জমে। স্বাস্থ্যবিধি না মানা প্রসঙ্গে আমরা চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত হাটে দেখা যায়, সারি সারি বাঁশ আর খুঁটি দিয়ে করা হয়েছে পশু বাঁধার ব্যবস্থা। এরই মধ্যে অনেক গরু হাটে তোলা হয়েছে। তবে ক্রেতা তেমন একটা নেই। কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে আসা রেজাউল কবির বলেন, ১০টি মাঝারি আকারের গরু নিয়ে শুক্রবার এসেছি। এখনো একটি গরুও বিক্রি হয়নি। হাটে আসা কয়েকজন গরু ব্যবসায়ীকে মাস্কের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেন, কতক্ষণ মাস্ক পরে থাকা যায়? হারিয়ে যায়। এত মাস্ক কই পাব।
স্বাস্থ্যবিধি ইজারাদারদের নিশ্চিত করতে হবে জানিয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বলেন, শর্তগুলো মানার ক্ষেত্রে ইজারাদারদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শর্ত না মানলে ইজারা বাতিলও হতে পারে। সিটি করপোরেশন বলছে, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি জোর দেওয়া হচ্ছে। তাই অন্য বছরগুলোর তুলনায় নতুন কয়েকটি শর্তও আরোপ করা হয়েছে হাট বসানোর ক্ষেত্রে। এর মধ্যে রয়েছে- গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে ঢুকতে দেওয়া হবে না; বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিরাও হাটে ঢুকতে পারবে না; হাটে প্রবেশকারীকে গ্লাভস, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে ঢুকতে হবে; হাত ধোয়ার জন্য হাটে রাখতে হবে পর্যাপ্তসংখ্যক সাবান; যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে; হাটে ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য আলাদা গেট থাকবে; হাটে বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। কিন্তু হাট ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মো. নাজমুল করিম মানিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গরুর হাট থেকে করোনো সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটি আমাদের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। পশু ব্যাপারীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। অনেকে থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখেন। ক্রেতা-বিক্রেতার সমন্বয়ে একটা জটলার সৃষ্টি হবে। এতে ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা রয়েছে।