মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

অডিও রেকর্ডে খুনের বর্ণনা

মির্জা মেহেদী তমাল

অডিও রেকর্ডে খুনের বর্ণনা

২ মে নিখোঁজ হন মুন্সীগঞ্জের আরাফাত মোল্লা (৫০)। তার স্ত্রী আকলিমা বেগম ভেবেছেন হয়তো কোথাও গেছেন। চলে আসবে। আগে আরাফাতের বেশ কয়েক দিন রাতে ফিরে না আসার ঘটনা রয়েছে। কিন্তু ১৫ দিন পর আকলিমার মনে ভয় হয় তার স্বামীকে নিয়ে। এতদিন তো কখনো বাড়ির বাইরে থাকেন না আরাফাত। তবে গেলেন কোথায়! আকলিমা তার স্বামীর খোঁজে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তার স্বামীর কোনো খোঁজ পান না। পরিচিত বন্ধু-বান্ধবের কাছেও খোঁজ-খবর নেন। পাড়া প্রতিবেশী-সবখানেই তার সন্ধান করেছেন। কিন্তু কেউ আরাফাতের খোঁজ দিতে পারেন না। স্বামীকে না পেয়ে দিশাহারা আকলিমা বেগম। তিনি প্রথম থানায় ছুটে যান। পুলিশের কাছে তার স্বামীর নিখোঁজের খবর জানান। ১৫ মে তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। মুন্সীগঞ্জ থানা পুলিশ আরাফাতের সন্ধানে মাঠে নামে। কিন্তু আরাফাতের খবর পুলিশও পায় না। আরও সময় গড়াতে থাকে। আরাফাত নিখোঁজ, এটি যেন সবাই মানসিকভাবে মেনে নিয়েছেন। কারণ তার উদ্ধারে না পরিবার, না পুলিশ-কারও আর কোনো তৎপরতা নেই। হঠাৎ এক দিন আকলিমা থানায় গিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। হঠাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক নারীর কথাবার্তার অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়। মুন্সীগঞ্জের মানুষের মুখে মুখে এই রেকর্ডের কথা। পুলিশও এই রেকর্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। পুলিশ যখন জানতে পারেন, কণ্ঠটি আর কেউ নন, এটি আরাফাতের স্ত্রী আকলিমা বেগমের। আকলিমা বেগম তার স্বামীকে কীভাবে হত্যা করেছেন, তার বর্ণনা ছিল ওই ভয়েস রেকর্ডে। পুলিশ নড়েচড়ে বসে। গ্রেফতার করে আকলিমা বেগমকে। পরে তার দেখানো বাড়ির রান্না ঘরের মেঝে খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, আরাফাত মোল্লা গত ২ মে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে নিখোঁজ হলে তার স্ত্রী আকলিমা বেগম ১৫ মে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আরাফাত মোল্লাকে পুলিশ খোঁজ করতে থাকে। তিনি বলেন, পরবর্তীতে ৩০ মে দ্বিতীয় দফায় আকলিমা বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আমরা বিভিন্নভাবে তদন্ত করতে থাকি। তাকে গ্রেফতারের পর তার দেখানো স্থান থেকেই লাশ উত্তোলন করা হয়। তিনি আরও বলেন, লাশ মাটিচাপা দেওয়ার সময় আকলিমাকে সহযোগিতা করার অপরাধে রিয়াজ (২৫) নামে আরেক যুবককে আটক করা হয়েছে। তিনি হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, পরকীয়ার জেরে স্বামীকে হত্যা করে রান্নাঘরে লাশ মাটিচাপা দিয়ে রাখেন আকলিমা। সেই লাশের ওপর বসেই দুই মাস ১৪ দিন রান্নাসহ সব কাজকর্ম করেছেন স্ত্রী আকলিমা বেগম। আর স্বামীকে হত্যা করে নিজেই থানায় গিয়ে নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন তিনি। ওসি বলেন, স্বামীর পরকীয়ার জন্য তিনি এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে আমাদের জানান। আরাফাত মোল্লাকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় সকালের দিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

সর্বশেষ খবর