বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

খুনি ঘরের লোক

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনি ঘরের লোক

পরনে লুঙ্গি, শার্ট। গলায় চিকন পাটের রশি। যুবকের লাশটি ভাসছিল পুকুরে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ১০ দিন পর তার পরিচয়ও মেলে। স্বজনরা শনাক্ত করেন তিনি রুবেল উদ্দিন (২৫)। আর এক বছর পর জানা যায় খুনের রহস্য। খুনি অন্য কেউ নন, ঘরের লোক। তার আপন দুলাভাই। খুনি চক্রের দুজনকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এটি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পশ্চিম মনসার ঘটনা। ঘটেছে ২০১৮ সালে।

অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের পর পটিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। চার মাস তদন্ত করেও পুলিশ খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারে না। পরে মামলার তদন্তভার যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইতে। পিবিআই ক্লু-লেস এ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়।

পিবিআই জানায়, রুবেলের খুনি জামশেদ একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। মাঝেমধ্যে শ্যালক রুবেল তার সহযোগী হতেন। ছিনতাইয়ের টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধের জেরেই এ খুন। জামশেদ তার সহযোগীদের নিয়ে কৌশলে রুবেলকে তার অটোরিকশাসহ তুলে নিয়ে খুন করেন। পরে অটোরিকশাটিও ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।

রুবেলের লাশ উদ্ধারের ১০ দিন পর শনাক্ত করেন স্বজনরা। আর তখন রুবেলের বোন নিজের স্ত্রীর সঙ্গে জামশেদও খুব কান্নাকাটি করেন। ১০ দিন নিখোঁজের পর রুবেলের লাশ পাওয়া যায়। তত দিনে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন জামশেদও। তার অভিনয় এতটাই নিখুঁত ছিল যে পরিবারের সদস্যরা বুঝতেও পারেননি তিনিই এ খুনের সঙ্গে জড়িত। মহানগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও বোয়ালখালী থেকে অভিযান চালিয়ে রোকন উদ্দিন মামুন (৪০) ও নাছির (২২) নামে খুনিচক্রের দুই সদস্যকে পাকড়াও করা হয়। তারা জামশেদের (২৮) সহযোগী। এর মধ্যে মামুন আদালতে  ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, জামশেদ ও নাছিরের পরিকল্পনায় রোকনকে ভাড়া করে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। রোকনের বিরুদ্ধে রাউজান থানায় তিনটি হত্যা মামলা, পাঁচলাইশ থানায় অস্ত্র মামলা ও কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে গ্রেফতার ওই দুজনসহ মোট সাতজন জড়িত ছিলেন বলে জবানবন্দিতে মামুন জানিয়েছেন।

তাদের সহযোগী ওমর ফারুক জানিয়েছেন, বড়বোনের স্বামী জামশেদের সঙ্গে রুবেলের পারিবারিক বিরোধ ছিল। তার জেরে জামশেদ ও নাছির মিলে রুবেলকে হত্যার জন্য রোকনকে ভাড়া করেন। সে হিসেবে পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে রুবেলের সিএনজি অটোরিকশা করে ৩১ আগস্ট ভোরে পটিয়া যান মোট চারজন। পথে তারা রুবেলকে গলায় রশি পেঁচিয়ে খুন করে লাশটি সড়কের পাশে পুকুরে ফেলে দেন। বিক্রি করে দেওয়া রুবেলের অটোরিকশাটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বাসিন্দা আবুল কাশেমের পুত্র রুবেল চট্টগ্রাম মহানগরে সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন। চান্দগাঁও থানার ওসমানিয়া পুলের গোড়ায় সেলিমের কলোনিতে ভাড়া থাকতেন। পিবিআই জানায়, মামুনের জবানবন্দিতে জামশেদ ও তার সহযোগীদের নাম আসার পর তারা পালিয়েছেন। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর