গত সাত বছরে একটি চক্রের মাধ্যমে আনা দুই শর বেশি অস্ত্র দেশে কেনাবেচা হয়েছে। এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছিল সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজিতে। সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে প্রতিটি আগ্নেয়াস্ত্র আনা হতো ৫০ হাজার টাকায়। এরপর সেসব অস্ত্র দেশে বিক্রি করা হতো ৮০-৯০ হাজারে।
বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর, দারুস সালাম ও গাবতলী এলাকায় একাধিক অভিযানে পাঁচ অস্ত্র চোরাকারবারিকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেট কার, আটটি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগাজিন ও আটটি গুলি জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন আকুল হোসেন, ইলিয়াস হোসেন, আবদুল আজিম, ফারুক হোসেন ও ফজলুর রহমান। তারা যশোরের বেনাপোল ও শার্শা উপজেলার বাসিন্দা। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, সম্প্রতি ডিবির গুলশান বিভাগ বিভিন্ন অপরাধীর কাছ থেকে বেশ কয়েকটি অবৈধ অস্ত্র ও গুলি জব্দ করে। এসব ঘটনায় করা মামলাগুলো তদন্তকালে জানা যায়, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীর একটি গ্রুপ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা যশোরের বেনাপোল থেকে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে তা সারা দেশে অপরাধীদের কাছে সরবরাহ করছে। তদন্তের ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে অস্ত্র বেচাকেনা দলের পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, চক্রের হোতা আকুল নিজে বা তার বিশ্বস্ত লোকজনের মাধ্যমে বেনাপোল সীমান্ত থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন। আকুল ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক অস্ত্র নিজে বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছে। এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, অস্ত্র চোরাচালানসহ চক্রের সদস্যরা তক্ষক প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, গোল্ড চোরাচালান, প্রত্নতাত্ত্বিক মূর্তি, ইয়াবা, আইসের ব্যবসা করত। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা ৫০ হাজার টাকায় কেনা অস্ত্র বাংলাদেশে বিক্রি করত ৮০-৯০ হাজার টাকায়। অভিযানের বিষয়ে ডিবি সূত্র জানায়, বুধবার রাতে আন্তর্জাতিক অস্ত্র বেচাকেনা দলের সদস্যরা বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলি নিয়ে অপরাধীদের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রাইভেট কারে করে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড হয়ে ঢাকায় ঢুকবে। এমন তথ্যে ডিবি গুলশান বিভাগের তিনটি টিম দারুস সালামের দিয়াবাড়ী রাস্তা, বেড়িবাঁধ রাস্তা ও কল্যাণপুর সড়কে নজরদারি বাড়ায়। রাত আনুমানিক সোয়া ৩টার দিকে গাবতলী ব্রিজের ইউলুপ দিয়ে সন্দেহজনকভাবে একটি সিলভার রঙের প্রাইভেট কার দ্রুতগতিতে উত্তর দিকে যেতে থাকলে দিয়াবাড়ী টিম রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় এবং অন্য টিমগুলো প্রাইভেট কারটির পিছু ধাওয়া করতে থাকে। ডিবির সদস্যরা স্থানীয়দের সহায়তায় চলাচলরত গাড়ি দিয়ে দারুস সালাম বেড়িবাঁধ বড়বাজার আক্তার হাজীর মাংসের দোকানের সামনের রাস্তায় যানজট সৃষ্টি করেন। যানজটে আটকা পড়া গাড়িটিকে জব্দ করার পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ডিবি পুলিশ সদস্যরা এর যাত্রীদের গ্রেফতার করেন।