আগামী তিন বছরের জন্য যে নতুন আমদানি নীতি তৈরি করছে সরকার, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বাড়াতে তাতে নতুন নতুন ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত নীতিতে প্রথমবারের মতো একটি ধারা যুক্ত হচ্ছে যে ধারায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কোনো ধরনের জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রস্তাবিত নীতিতে ব্যবসায়ীদের ঝামেলা কমাতে পাঁচ বছরের জন্য সনদ নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হচ্ছে। কমানো হচ্ছে ফির পরিমাণ।
সূত্র জানান, ২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত আমদানি নীতির খসড়া তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে এখন ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দফতরগুলোর মতামত নেওয়া হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আগামী তিন বছরের জন্য নতুন যে আমদানি নীতি করা হচ্ছে তাতে ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ বৃদ্ধি ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাগজপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ থাকছে। ব্যবসায়ীদের আমদানি নিবন্ধনের খরচ কমানো হচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ায়; বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানির মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতারণা নিরুৎসাহ করায় এটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ অভিহিত করে প্রথমবারের মতো আমদানি নীতিতে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে।প্রস্তাবিত আমদানি নীতিতে বলা হয়েছে- কোনো আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক জাল, ঘষামাজা, মিথ্যা কাগজপত্র দাখিল করে জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধন সনদ গ্রহণ, গ্রহণের উদ্যোগ বা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করলে আমদানি নীতি আদেশের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানিকারককে কালো তালিকাভুক্তি, তার সনদ স্থগিত বা বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিলে এক্সপোর্টস কন্ট্রোল অ্যাক্ট, ১৯৫০ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য যেসব সুযোগ রয়েছে- ১. আমদানি ঋণপত্র খোলার পর ঋণপত্রের কপি ১৫ দিনের মধ্যে আমদানি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয়। নতুন নিয়মে ডিজিটাল মাধ্যমে জমা দিলেই চলবে। ২. বর্তমান নীতিতে সংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানি দফতরাধীন এলাকার মধ্যে ঋণপত্রের মনোনীত ব্যাংক পরিবর্তনের সুযোগ আছে, নতুন নীতিতে ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো ব্যাংক পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়েছে। ৩. বর্তমান নীতিতে আমদানির জন্য প্রাথমিক সনদের সর্বনিম্ন নিবন্ধন ফি ৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা ধার্য রয়েছে। বার্ষিক নবায়ন ফি দিতে হয় ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। প্রস্তাবিত নীতিতে সর্বনিম্ন প্রাথমিক নিবন্ধন ফি কমিয়ে ৩ হাজার টাকা, বার্ষিক নবায়ন ফি ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বছর বছর নবায়নের ঝামেলা যাতে না পোহাতে হয় এ লক্ষ্যে পাঁচ বছরের জন্য নবায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে আমদানি নীতিতে। এজন্য সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি প্রস্তাব করা হয়েছে। ৪. প্রচলিত নীতিতে আমদানিকারকদের বার্ষিক আমদানির পরিমাণ ৫ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে পর্যন্ত মোট ছয়টি শ্রেণিতে নিবন্ধন সনদের সুযোগ ছিল। এটি সহজ করার জন্য নতুন নীতিতে পাঁচটি শ্রেণিতে নিবন্ধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বার্ষিক আমদানি সীমা ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ১০ লাখ থেকে তার ওপরে ৫০ লাখ, ১ কোটি, ৫ কোটি ও ৫ কোটির ওপরে এ পাঁচটি ভাগে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, কোনো আমদানিকারক ইচ্ছা করলে যাতে এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ বছরের জন্য বর্ষসংখ্যার গুণিতক হারে নবায়ন ফি দিয়ে আমদানি সনদ নিবন্ধন নিতে পারেন সে সুযোগ রাখা হয়েছে নতুন নীতিতে। এতে ব্যবসায়ীদের ঝামেলা কমবে।