সোমবার, ৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

তিন কলেজছাত্রী নিখোঁজে প্রেমিকসহ গ্রেফতার ৪

মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পল্লবী থেকে কলেজছাত্রী তিন বান্ধবী নিখোঁজের ঘটনায় পল্লবী থানায় দায়ের করা মামলায় প্রেমিকসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে মো. রকিবুল্লাহ্র দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গ্রেফতার অন্য তিন আসামির বয়স নির্ধারণের পর রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে নিখোঁজ তিন বান্ধবী মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে তারা আর ফেরেনি। গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। ফেসবুকেও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থী এখনো উদ্ধার হয়নি। অভিযান চলছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তাদের সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে ওসি পারভেজ বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ওই তিন শিক্ষার্থীর বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। যেহেতু ওই শিক্ষার্থীদের কোনো পাসপোর্ট নেই। ধরেই নেওয়া যায় বৈধ উপায়ে তাদের দেশ ত্যাগের কোনো সুযোগ নেই। অবৈধ পথে যাতে তারা দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেটি নিয়ন্ত্রণ এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের খুঁজে বের করতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।

 ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল বিকালে বলেন, টিকটক চক্র এর আগে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নারী পাচার করেছিল। নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে স্নেহা নামের মেয়েটি ছিল খুবই উচ্চাভিলাষী। ধারণা করা হচ্ছে, তার সঙ্গে টিকটক চক্রের যোগাযোগ রয়েছে। সে-ই অন্য দুই শিক্ষার্থীকে কৌশলে সঙ্গে নিয়ে পাচারকারীদের সঙ্গে লাপাত্তা হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) কাজী দিলখুশ জান্নাত নিসা, কানিজ ফাতেমা ও স্নেহা আক্তার পল্লবীর ১১ নম্বর প্যারিস রোডের ‘সি’ ব্লক-১৮ নম্বর লাইন এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। তারা সবাই উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে জান্নাত নিসা মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, স্নেহা পল্লবী ডিগ্রি কলেজ ও কানিজ ফাতেমা দুয়ারীপাড়া কলেজের ছাত্রী। রিমান্ড : গত শনিবার রাতে নিখোঁজ শিক্ষার্থী দিলখুশ জান্নাত নিশার বড় বোন কাজী রওশন দিল আফরোজ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য গ্রেফতারদের সাত দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা বেগমের আদালত শুনানি শেষে কেবলমাত্র রকিবুল্লাহ্্র (২০) দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তরিকুল্লাহ, জিনিয়া রোজ ও  অয়নকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এদের বয়স নির্ধারণের পর রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। মামলার এজাহারে বলা হয়, নিখোঁজ কাজী দিলখুশ জান্নাত নিশা (১৬) পল্লবী থানাধীন সেকশন-১১, ব্লক-সি, ১৮ নম্বর রোডের বাসায় বসবাস করতো। সে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। লেখাপডার সুবাদে এক নম্বর আসামি তরিকুল্লাহ, রাকিকুল্লাহ, জিনিয়া ও অয়নসহ দিলখুশের বান্ধবী লেহা আক্তার (১৭) ও কানিজ ফাতেমার (১৮) সঙ্গে পরিচয় হয়। এর মধ্যে তিন নম্বর আসামি জিনিয়া প্রায় সময় দিলখুশের বাসায় আসা-যাওয়া করতো এবং প্রায় সময় তরিকুল্লাহ ও জিনিয়া বাসায় এসে নিশাকে ঘোরাফেরার জন্য বাইরে নিয়ে যেত। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালের দিকে দিলখুশ বাসা থেকে বের হয়। এজাহারে আরও বলা হয়, নিখোঁজের পর তার পরিবারের সদস্যরা খোঁজ করে দেখতে পান, আলমারির ভিতরে রাখা নগদ ছয় লাখ টাকা, স্বর্ণের গহনা, স্কুল সার্টিফিকেট ও জন্ম নিবন্ধনপত্র নেই।

তার বান্ধবী নেহা আক্তারের বাবা জানান, বাসা থেকে তার মেয়ে নগদ ৭৫ হাজার টাকা, সার্টিফিকেট ও জন্ম নিবন্ধনপত্র নিয়ে গেছে। এ ছাড়াও কানিজ ফাতেমার বাবা জানান, বাসা থেকেও তার মেয়ে আড়াই ভরি স্বর্ণের গহনা, স্কুল সার্টিফিকেট ও জন্ম নিবন্ধনপত্র নিয়ে গেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে দিলখুশ জান্নাত নিশা, কানিজ ফাতেমা ও নেহা আক্তার বাসা থেকে বের হয়। তারা কলেজ ড্রেস পরে এবং ব্যাগ নিয়ে বেরিয়েছিল। কিন্তু তারা আর বাসায় ফেরেনি।

সর্বশেষ খবর