গাজীপুর কালিয়াকৈরের রত্না বেগমের বিয়ে হয়েছিল হাশেম উদ্দিনের সঙ্গে। দুই সন্তানের জননী রত্না বেগমকে যৌতুকের জন্য হাশেম মারধর করতেন। প্রায় প্রতিদিন মার খেয়ে আর সহ্য করতে পারেননি রত্না বেগম। তিনি তার বাবার কাছে খবর পাঠান। তাকে বাঁচাতে সেখান থেকে নিয়ে যেতে বলেন। মেয়ের ওপর এমন নির্যাতনের খবর পেয়ে ছুটে যান বাবা আকবর আলী। নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন মেয়েকে। বেশ কয়েকমাস এভাবেই কাটে। হঠাৎ রত্না বেগমের শ্বশুরবাড়ির লোকজন আকবর আলীর বাড়িতে হাজির। তারা রত্না বেগমকে নিয়ে যেতে চান। রত্না বেগম যেতে ভয় পান। একপর্যায়ে তারা ভাশুরের অসুস্থতার অজুহাত দেখান। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আকবর আলী তার মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যেতে বলেন। এতে রত্না বেগম রাজি হন। স্বামীর সঙ্গে ফিরে যান রত্না বেগম। পরদিন আকবর আলী খবর পান। তার প্রিয় কন্যা রত্না বেগম আর নেই। মারা গেছে। এ খবর শুনে কাঁদতে কাঁদতে আকবর আলী মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যান। গিয়ে দেখেন, রত্নার লাশ অর্ধেক চৌকির ওপর এবং অর্ধেক মাটিতে শোয়া অবস্থায় রয়েছে। ঘটনাটি ২০১৫ সালের ২৮ নভেম্বরের।
মেয়ের লাশ দেখে পাগলপ্রায় বাবা কীভাবে কী হলো তা জানতে মেয়ের জামাইর কাছে প্রশ্ন রাখেন। ক্ষুব্ধ হন মেয়ের জামাই হাশেম। গালাগাল করেন শ্বশুরকে। রত্নার বাবা আকবর আলী থানায় যান। কিন্তু থানা পুলিশ মামলা নেয় না। মেয়ে হত্যার বিচারের দাবি নিয়ে অসহায় বাবা বিভিন্ন দফতরে ঘুরতে থাকেন। কিন্তু কোনো সান্ত¡না তিনি পান না। ক্লান্ত আকবর আলী আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলা দায়ের করেন সেখানে। তদন্ত শুরু করে পুলিশ। রত্না বেগমের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ’আত্মহত্যাজনিত’ বলে মতামত দেন ফরেনসিক ডাক্তার। এমন প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু রত্নার বাবা আকবর আলী আদালতে নারাজি দেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্ত পর্যায়ে গ্রেফতার হয়ে রত্নার স্বামী হাশেম জানায়, টাকা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তিনি এবং সহযোগী রিপন রত্নাকে হত্যা করে। পরে লাশ রশিতে ঝুলিয়ে দিয়ে ’আত্মহত্যা’র নাটক সাজায়। রত্নার লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশের তৈরি করা সুরতহাল প্রতিবেদনে গলায় ফাঁস অর্ধচন্দ্রাকৃতির উল্লেখ ছিল না। আবার ডাক্তার ’আত্মহত্যা’ মর্মে প্রতিবেদন দেওয়ায় প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলেন।