শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সব প্রভাবই মোকাবিলা করছি আমরা

-অধ্যাপক আসিফ নজরুল

সব প্রভাবই মোকাবিলা করছি আমরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আমরা আগে থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জে আছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান প্রভাবটা হলো এক্সট্রিম ওয়েদার বা চরম আবহাওয়া। হঠাৎ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হবে, অনেক বেশি হবে এবং অনেক তীব্রভাবে হবে। এ তিনটা জিনিসই আমরা বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি। সাতক্ষীরার গাবুরায় শুধু করোনার সময়েই দুটো দুর্যোগ হয়েছে। এ দুর্যোগগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের অনেক বড় লক্ষণ, যা এরই মধ্যে আমরা মোকাবিলা করছি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, এখানে সাইক্লোন বেড়ে গেছে। এসবের প্রভাবে লোনা পানি এরই মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে গেছে। এর পরের প্রভাব হলো- আমাদের উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে বিশ্বের ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর অনেক দ্বীপ সাগরের মধ্যে চিরতরে হারিয়ে গেছে। এসব লক্ষণ আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের। প্রি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পিরিয়ডের তুলনায় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা, সেটা ধরে রাখা না গেলে ভয়াবহ অবস্থা হবে বাংলাদেশের। তিনি বলেন, এবার কপ-২৬ সম্মেলন হচ্ছে। এখানকার মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে প্যারিস চুক্তির পরবর্তী লক্ষ্য পূরণ। মূল লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো এমিশনে চলে যাওয়া। অর্থাৎ ২০৫০ সালের পর বায়ুমন্ডলে মানবসৃষ্ট আর কোনো কার্বন জমা হবে না। যেটুকু কার্বন মানুষ সৃষ্টি করবে, সেটুকু বায়ুমন্ডল থেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কীভাবে সেটা করবে? প্রথমত, বনায়নের মাধ্যমে। আর কিছু কৃত্রিম প্রক্রিয়া আবিষ্কারের চেষ্টা হচ্ছে, যার মাধ্যমে বায়ুমন্ডলের কার্বন জড়ো করে ভূগর্ভে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠকে আরও কার্বন ধরে রাখার জন্য প্রস্তুত করা। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ওপর নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ। অনেক ভালো ভালো প্রতিশ্রুতি শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ ভাগ মিথেন নিঃসরণ কমানো হবে। বনায়ন উজাড় বন্ধ করা হবে। ফসিল ফুয়েলে বিনিয়োগ বন্ধ হবে। এ প্রতিশ্রুতিগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য পূরণে যথেষ্ট কিনা তা নিয়ে অনেক পরীক্ষার আছে। যত দিন পর্যন্ত জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে কম দামে সৌরবিদ্যুৎ বা বায়ু বিদ্যুৎ সরবরাহ করা না যাবে, তত দিন পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ঝুঁকি থেকেই যাবে।

আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অধিকাংশ আলোচনা কার্বন নিঃসরণের দিকে নিবদ্ধ থাকে। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নে মিথেনের ভূমিকা অনেক বেশি। ১ মলিকোল মিথেন ১ মলিকোল কার্বনের চেয়ে ২২ গুণ বেশি ভূমিকা রাখে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে। যদিও কার্বনের চেয়ে মিথেন কম সময় থাকে বায়ুমন্ডলে, তবুও এটা  বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বড় ভূমিকা রাখছে।

আর কার্বনের মতো মিথেনও উৎপাদন করছে উন্নত বিশ্ব। তাদের বড় বড় গরুর খামারে প্রচুর মিথেন উৎপাদন হচ্ছে। শুনতে অবাক লাগলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য একটা গরু একটা গাড়ির চেয়ে অনেক বেশি দায়ী। একটা গরু এক ঘণ্টায় ঢেকুর তুলে যে পরিমাণ মিথেন ছাড়ে, সেটা প্লাস্টিক ব্যাগে ঢুকিয়ে ম্যাচ জ্বালালে সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যাবে। এ জন্য অনেকে এখন গরুকে ঘাস না খাইয়ে সমুদ্রের উদ্ভিদ খাওয়াচ্ছে। এতে ৩০ ভাগ কম মিথেন উৎপাদন হয়। যেহেতু বেশি মিথেন উৎপাদন করছে উন্নত বিশ্ব, তাদেরই এটার সমাধান বের করতে হবে।

সর্বশেষ খবর