সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
দেড় হাজার মানুষকে নিমন্ত্রণ

মহাধুমধামে বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

মহাধুমধামে বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে

রাজশাহীতে ধুমধাম করে বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সানাইয়ের সুর আর ঢাকের শব্দে এ সময় মুখরিত ছিল চারপাশ। মাঝে মাঝে হয়েছে উলুধ্বনি। একদল নারী নেচেই যাচ্ছিলেন। এর ফাঁকে ফাঁকে চলছিল বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিকতা। বিয়ের জন্য গত শনিবার রাজশাহীর খড়খড়ির শ্রী শ্রী গোপালদেব ঠাকুর মন্দিরে রীতিমতো ‘মহাআয়োজন’ করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১১৩ বছরের পুরনো এ মন্দির চত্বরে ১৭ বছর আগে পাশাপাশি লাগানো হয়েছিল গাছ দুটি। হিন্দু শাস্ত্রমতে, পাশাপাশি বট-পাকুড় গাছ থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। এই রীতি মেনেই ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে গাছ দুটির। বটকে বর, পাকুড়কে কনে ধরে নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। বিয়ের আগে বটের নাম রাখা হয় ‘বিজয়’ আর পাকুড়ের নাম হয় ‘বনলতা’।

দেখা গেছে, বিয়ের জন্য মন্দিরে প্রবেশের পথে বানানো হয়েছিল গেট। সাজিয়ে তোলা হয় বট-পাকুড়সহ গোটা মন্দির চত্বরকে। পাশেই প্যান্ডেল বানিয়ে চলছিল অতিথিদের খাওয়া-দাওয়া। আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। তাদের জন্য রান্না করা হয় পোলাও, সবজি ঘণ্ট আর পায়েস। পাতে দেওয়া হয়েছিল জলপাইয়ের আচার এবং পাপড়।

বর-কনের পাশে ছাদনাতলা সাজানোর পর দুপুর ১২টায় সেখানে নারায়ণ পূজার মধ্য দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুরে দল বেঁধে নারীরা পুকুরে গিয়ে গঙ্গাপূজা সেরে আসেন। জল দিয়ে ভরে আনেন ঘটক। সবাই মিলে পালের বাড়ি থেকে আনেন হাঁড়ি। বিকাল ৪টা থেকে ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের নিবেদন। কিছুক্ষণ পরই একদল নারী আসেন বরযাত্রী হয়ে। গেটে বাতাসা খাইয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় তাদের। বাদ্য-বাজনা আরও বেড়ে যায়। এবার নেচে ওঠেন সব বয়সী মানুষই। বর-কনের চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকেন অতিথিরা। পুরোহিত পুলক আচার্য শুরু করেন বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ঠিক গোধূলিলগ্নে মন্ত্র পড়ে বিয়ে সম্পন্ন করেন পুরোহিত। এই বিয়েতে বটের বাবা-মা হয়েছিল বিধান চন্দ্র সরকার ও আরতি রানী সরকার দম্পতি। বিশ্বজিৎ সরকার ও কনিকা রানী সরকার দম্পতি হয় পাকুড়ের বাবা-মা। কনিকা বলেন, ‘বাস্তবে আমি দুই ছেলের মা। ১০ দিন আগে পাকুড়ের মা হই। মেয়ের বিয়েও দিলাম। এ অনুভূতি অন্যরকম। মেয়ের বিয়ে দিলে যেমন আনন্দ লাগে, আজ আমার তেমনই লাগছে।’ মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার জানান, ‘হিন্দুশাস্ত্রে আছে বট-পাকুড় একসঙ্গে থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। সে জন্যই এ আয়োজন। হিন্দু শাস্ত্রমতেই বিয়ে সম্পন্ন হলো। বট-পাকুড় এখন যুগ যুগ ধরে এভাবে পাশাপাশি থাকবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

সর্বশেষ খবর