শুক্রবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

আশিয়ানের এমডি নজরুলের বিরুদ্ধে ফের গ্রেফতারি পরোয়ানা

এক মাসে তিনবার পরোয়ানা জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় আশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ দুজনের বিরুদ্ধে আবারও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালত এ পরোয়ানা জারি করে। গতকাল বাদীপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম মনির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।   

তিনি বলেন, ‘আমরা আসামি নজরুল ইসলাম ও তার পিএস জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিলাম। আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করে ১ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।’ ২০২১ সালের ৭ জুন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মো. আলী হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। অভিযোগ তদন্ত করে ওই বছর ১৭ নভেম্বর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী মো. জাকির হোসেন ও অজ্ঞাতনামা দু-তিন জন। মামলার অভিযোগে বলা হয়- আসামি নজরুল ইসলাম মারবেল, গ্রানাইট, সুইমিং পুলের ওয়াটার বডি, বোতাম, টাইলস, ফিটিংসসহ অন্যান্য কাজ করার জন্য ভুক্তভোগী আলী হোসেনের প্রতিষ্ঠানের প্যাডে এসব জিনিসপত্রের বিবরণ ও মূল্য উল্লেখ এবং কোটেশন তৈরি করে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর আসামির প্রতিষ্ঠানে দাখিল করেন। এরপর আসামি নজরুল ইসলাম বাদীর কোটেশন মূল্য পুনর্নির্ধারণ করে কার্যাদেশ প্রদান করেন। পরে একই বছরের ২৮ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আসামি নজরুল ইসলাম তার নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করে ৩ কোটি ৪ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৫ টাকা বিল করেন। এর মধ্যে বিভিন্ন তারিখে আসামি নজরুল ইসলাম ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। অবশিষ্ট ১ কোটি ৫৪ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৫ টাকা না দিয়ে ভুক্তভোগী আলী হোসেনকে হয়রানি করতে থাকেন। ফলে আলী হোসেনের ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি চরম আর্থিক অনটনে পড়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। এরপর ২০২১ সালের ৩০ মে এ পাওনা টাকা দাবি করলে আসামি নজরুল ইসলাম ভুক্তভোগী আলী হোসেনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং নজরুল ইসলামের নির্দেশে তার সহযোগী জাকিরসহ অজ্ঞাত দু-তিন জন তাকে শারীরিকভাবে মারধর করেন। আলী হোসেনকে আটকে রেখে তার মোবাইল এবং একটি পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেন আসামিরা। উপরন্তু এ সময় ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে প্রাণনাশের হুমকি দেন তারা। একপর্যায়ে অলিখিত পাঁচ-ছয়টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেন। গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে কথা বলতে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নজরুল ইসলাম ভূঁইয়াকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। গতকাল সন্ধ্যায় খিলক্ষেত থানার ওসি (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, আলী হোসেনের করা মামলায় আশিয়ান গ্রুপের এমডি নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার চিঠি এখনো তারা পাননি। চিঠি পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে ডিসেম্বরে পৃথক দুই মামলায় নজরুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এর পর থেকে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। মামলাসূত্রে জানা গেছে, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের কাছে ২০১৩ সালে ৩০ কোটি টাকায় ৫ বিঘা জমি বিক্রি করে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। ২০২০ সালে একই জমি আরও ২০ কোটি টাকা দাম বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকার নকল চুক্তিপত্র করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার নজরুল। প্রতারণার দায়ে ওই বছর ৯ ফেব্রুয়ারি নজরুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে করা নর্দান ইউনিভার্সিটির মামলায় গত ১৫ ডিসেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হাসিবুল হক। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নজরুলের ভাই প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, পরিচালক জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, রহমত উল্লাহ ও মো. ফরিদ উজ্জামান। নজরুলসহ রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় পৃথক আরেক মামলায় নয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। প্রতারণার দায়ে ১ ডিসেম্বর নজরুলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন আনোয়ারা বেগম নামে এক নারী। এ দুই মামলায় নজরুলসহ ১৩ আসামি বর্তমানে পলাতক। নর্দান ইউনিভার্সিটির কো-অর্ডিনেটর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নজরুল বড় ধরনের প্রতারক। আপসের জন্য আমরা আলোচনায় বসেছিলাম। সেখানেও তারা অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তাই আমরা মামলা করতে বাধ্য হয়েছিলাম।’ উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের জুনে সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের দুই সদস্যকে আটক করে হত্যার চেষ্টা, মারধর, মোবাইল ও পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় নজরুলসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর ২০১৮ সালের এপ্রিলে আবাসন প্রতিষ্ঠান আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল রাজউকের অননুমোদিত আবাসিক প্রকল্পে সাধারণ মানুষের জমি না কিনে প্রকল্পভুক্ত করার। এর পাশাপাশি জাল দলিলে চার ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা অবৈধ ঋণও গ্রহণ করে। এ ছাড়া সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে আশিয়ান গ্রুপের এমডি নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জবরদখল, জালিয়াতি ও প্রাণনাশের হুমকির মতো ঘটনার প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর