শিরোনাম
শনিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

বেগুনি জলচর পাখি কালিম

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

বেগুনি জলচর পাখি কালিম

চকচকে নীলচে বেগুনি জলচর পাখি ‘কালিম’। তবে বিভিন্ন অঞ্চলভেদে এটিকে কালেম, কায়ুম, কালাম, কামিয়া, করমা, সুন্দরী ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। বাংলাদেশের হাওর, বাঁওর, খাল, বিল ও নদীপাড়ের জলাশয়গুলোতে এদের দেখতে পাওয়া যায়। বন্য কালিম পাখি দলবেঁধে থাকতে পছন্দ করে। আবার এ পাখি বাড়িতেও পোষা যায়। ছোট থেকে এদের ছেড়ে লালনপালন করলে পোষ মেনে যায়। পোষ মানলে কালিম পাখি আর যায় না। দিনাজপুর অঞ্চলে এ পাখি খুব একটা দেখা না গেলেও অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধারকৃত দুটি পাখি এখন দিনাজপুরের রামসাগরের মিনি চিড়িয়াখানায় বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। দর্শনার্থীসহ দূর-দূরান্তের পর্যটকদের পদভারে মুখরিত রামসাগরে এ পাখিটি দেখতেও ভুলছেন না কেউ। কালিম পাখি খুব দুঃসাহসী, লড়াকু স্বভাবের। দেখতে চকচকে নীলচে বেগুনি। আলতা রঙের কপাল-মাথা ও পা। কালিম পাখির  ঠোঁট ও মাথার ঝুটি লালচে কমলা বা লাল বা লালচে বেগুনি হয়ে থাকে। গায়ের পালক নীলচে বেগুনি রঙের। লেজের তলা কার্পাস তুলার মতো সাদা। চোখের পাশে বৃত্তাকারে সাদাটে ছোপ। পা দুটি লম্বা, আঙুলগুলো লম্বা ও চিকন।

বন্য কালিম পাখির খাদ্য তালিকায় রয়েছে- ছোট মাছ, ব্যাঙ, কীটপতঙ্গ, শামুক, লতাগুল্ম, কচি পাতা, ধান, শস্যদানা, নলডাঙ্গার কচি ডগা, নরম ঘাস ইত্যাদি। গৃহপালিত কালিম পাখিকে ধান ও তার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় পোল্ট্রির ছোট দানার ফিড। কচুরিপানা বা অন্য কোনো শাকপাতাও খায় সে। কালিম পাখির বৈজ্ঞানিক নাম: (Porphyrio porphyrio) এ পাখি Rallidae (রেলিডি) পরিবার গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। কালিম পাখির গড় ওজন ৭৭০ গ্রাম ও দৈর্ঘ্য ৫১  সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা জলচর প্রাণী হলেও খাদ্যের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এরা এক বিল থেকে অন্য বিলে যায় না। প্রতিকূল অবস্থাতেও টিকে থাকা, এ পাখিটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি।

বনে থাকা কালিম পাখি বর্ষাকালে দুইবার ৪-৮টি করে ডিম দেয় এবং নিজেই তা দিয়ে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা লালনপালন করে। গৃহপালিত কালিম পাখি বছরে ৪-৬ বার ডিম দেয়। প্রতিবার ৮ থেকে ১০টি ডিম দেয়। ২৩-২৭ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসে। মায়ের সঙ্গে ১০/১৫ দিন ঘুরে ঘুরে খাবার খায়। তারপর নিজে নিজেই খাবার খেতে শুরু করে। প্রকৃতি থেকে দিন দিন হারিয়ে যাওয়া এ পাখিটিকে অনেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শখের বশে পালন করেন। পোষ মানার পর এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় পাখিদের সঙ্গে। যেখানেই থাকুক না কেন ডাক দিলেই উড়ে আসে। আর তাদের ডাকে মন তৃপ্ত হয়। পোষ মানা এ কালিম পখিটির বাজার মূল্য অনেক। ছোট বাচ্চা প্রতি জোড়া ২-৩ হাজার টাকা। একটু বড় বাচ্চার দাম আরও বেশি। দিনাজপুর বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা ও রামসাগর জাতীয় উদ্যানের তত্ত্বাবধায়ক মো. সাদেকুর রহমান সাদেক জানান, সুন্দরী এ কালিম পাখিটি কিছুদিন আগে একজনের বাড়ি থেকে এনে এখানে রেখেছি। ভালোভাবে উড়তে পারে না। পুরোপুরি উড়তে পারলে পাখি দুটিকে অবমুক্ত করে দেওয়া হবে। পাখিটিকে দেখতে এবং এর সম্পর্কে জানতে অনেক দর্শনার্থী ভিড় করছে।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর