আসল কমলা সাদকি জাত। এ জাতের কমলার বাণিজ্যিক চাষ হয় ভারতের দার্জিলিংয়ে। এবার দার্জিলিং থেকে পাহাড়ি ওই কমলার চারা এনে চাষ হচ্ছে নীলফামারীর সমতল ভূমিতেই।
নীলফামারীর সমতল ভূমিতে সাদকি কমলা চাষে সফল ব্যক্তিটির নাম লেবু মিয়া। জেলা সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের কচুকাটা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে ‘এ আর মামুন নার্সারি’। ওই নার্সারির একটি অংশে গড়ে তুলেছেন কমলার বাগান। সে বাগানে শোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় পরিপূর্ণ পাকা কমলা। ২০১৩ সালে ভারতের দার্জিলিং থেকে সাদকি জাতের কমলার চারা এনে রোপণ করেন তার নার্সারিতে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে চারা তৈরির পর এখন পরিপূর্ণ ফল পেতে শুরু করেছেন ৬০টি গাছের। আরও একটি অংশে নতুন করে রোপণ করেছেন ৬০০ চারা। বর্তমানে তার নার্সারিতে প্রস্তুত রয়েছে ৩০ হাজার সাদকি কমলার চারা। যা বিক্রি করছেন। এ ছাড়া কমলা এবং মাল্টাসহ আরও লক্ষাধিক চারা প্রস্তুত করেছেন, যা আগামী তিন মাসের মধ্যে জমিতে লাগানোর জন্য উপযুক্ত হবে। প্রসার এখানেই থেমে থাকেনি, তিনি আরও ১২ বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে গড়ে তুলেছেন লিচু বাগান। তার বাগানে ফলদ, বনজ, ঔষধিসহ প্রায় ৬০০ প্রজাতির গাছের চারা রয়েছে। নার্সারির মালিক লেবু মিয়া জানান, এক বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। দিন দিন তার নার্সারির প্রসার ঘটতে থাকে। বর্তমানে সাড়ে ১৩ বিঘা জমি ক্রয় করে বৃদ্ধি করেছেন নার্সারির এলাকা। সব খরচ বাদে প্রতি বছর আয় হয় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাগানের প্রতিটি গাছে হলুদ কমলা ঝুলে আছে। ভারতীয় জাতের এ ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে চাহিদাও বেশি। মানুষ আরও আকৃষ্ট হচ্ছেন সবুজে ঘেরা নার্সারির চারদিকে ছড়িয়ে থাকা চায়না কমলা, মাল্টা, ত্বিন ফল, পেঁপে, মিষ্টি লেবুসহ বিভিন্ন ফল ও ফুল দেখে। ওই গ্রামের আবদুল মতিন দয়া বলেন, ‘শুধু এলাকার মানুষ নয়, দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসছেন বাগান দেখতে। তারা এখানে এসে আকৃষ্ট হচ্ছেন গাছের সৌন্দর্যের প্রতি। এমন টানে নার্সারি থেকে চারা কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।’ মেজো ছেলে এ আর মামুন পড়ালেখার পাশাপাশি দেখভাল করছেন নার্সারি ব্যবস্যার। মামুন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের মাধ্যমে ফলের চারা সংগ্রহ করি। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে বাগানে লাগাই। ওই গাছের চারা উৎপাদন করে বাজারজাত করি। আমাদের বাগানের সাদকি কমলা খুবই সাড়া ফেলেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ চারা সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, নীলফামারী জেলার মাটি লেবুজাতীয় ফল চাষের জন্য উপযোগী। এখানের আবহাওয়া এবং মাটি অনুকূলে থাকায় প্রচুর কমলার চাষ হচ্ছে। জেলা সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের মামুন নার্সারি দার্জিলিংয়ের সাদকি জাতের কমলা চাষে সফল হয়েছে।