মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তে বিপাকে ৮ লাখ শিক্ষার্থী

আকতারুজ্জামান

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণায় স্থগিত হয়ে গেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা। পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮ লাখ শিক্ষার্থী। পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার প্রতিবাদে শনিবার রাজধানীতে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর কয়েক দিন ধরেই পরীক্ষার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করে আসছেন ছাত্র-ছাত্রীরা।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর পরীক্ষা চলবে কি না, গতকাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ সূত্রে জানা গেছে, ফাজিলের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা চলবে কি না এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে চাননি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের পরীক্ষা সশরীরে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তথ্যমতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মাত্র তিনটি পরীক্ষা বাকি ছিল। আর মাত্র দুটি পরীক্ষা বাকি ছিল ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বাড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য যাবতীয় পরীক্ষা স্থগিত করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘২২ ও ২৫ জানুয়ারি আমাদের পরীক্ষার দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম বর্ষে আমাদের প্রায় আড়াই বছর হতে চলল। কিন্তু প্রথম বর্ষ পাস করতে পারলাম না। এই অনিশ্চয়তা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ভেবে ভয় পাচ্ছি।’ জানা গেছে, গত বছর ২৯ ডিসেম্বর শুরু হয় ২০১৬-১৭ সেশনের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা। ইতিমধ্যে ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকি তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা যথাক্রমে গত ২৩, আগামী ২৭ ও ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘ তিন বছর অপেক্ষা শেষে এ মাসেই শেষ হতো তাদের স্নাতক পরীক্ষা। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় তাদের অপেক্ষার প্রহর আরও দীর্ঘ হলো। অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এত দিনে মাস্টার্স শেষ হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু এখনো অনার্সই শেষ করতে পারলাম না। আর মাত্র তিনটি পরীক্ষা বাকি ছিল। এসব পরীক্ষা কবে হবে সেটিও বলতে পারছি না।’ জানা গেছে, ফাজিল প্রথম ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল আগামী ৩০ জানুয়ারি। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু পরীক্ষা চলবে কি না ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনো এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়নি। এতে অনিশ্চয়তায় রয়েছে সারা দেশের ফাজিল শ্রেণিতে পড়া বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। সাতক্ষীরা আলিয়া কামিল মাদরাসার তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষা স্থগিত করেছে। কিন্তু আমরা এখনো দোলাচলে রয়েছি। আমরা পরীক্ষা স্থগিতের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জেনেছি। তবে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো নোটিস পাইনি।’ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে বিএ, বিএসএস ও আইন (সম্মান) পরীক্ষা ২০২০-এর বিভিন্ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা পাওয়ার পর স্থগিত করা হয়েছে এসব পরীক্ষাও। এই পরীক্ষাগুলোর তারিখ পরে ঘোষণা করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর