রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বঙ্গোপসাগরে ঝড়ে ২৫ ট্রলার ডুবি নিখোঁজ ২৭ জেলে, ২ লাশ উদ্ধার

বাগেরহাট ও বরগুনা প্রতিনিধি

বঙ্গোপসাগরে ঝড়ে ২৫ ট্রলার ডুবি নিখোঁজ ২৭ জেলে, ২ লাশ উদ্ধার

বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে ট্রলার -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে সুন্দরবন উপকূলে বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে ২৫টি ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় ২৭ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত দুই লাশের মধ্যে একজন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের আনোয়ার শেখের ছেলে আল মামুন শেখ (২৫) বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ সময় পর্যন্ত নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে কোস্টগার্ডের দুটি জাহাজসহ শতাধিক ফিশিং ট্রলার টানা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল। নিখোঁজ জেলেদের বাড়ি বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায়। তাদের মধ্যে ১০ জনের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া ও রামপাল উপজেলায়।

জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত ১০টায় বঙ্গোপসাগরের দুবলার চর থেকে ৪৫ কিলোমিটার গভীর সাগরে মাছের খনি হিসেবে খ্যাত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে ইলিশ ও সুন্দরবনের দুবলায় শুঁটকির জন্য মাছ আহরণে থাকা এসব ফিশিং ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ, দুবলার ফিশারম্যান গ্রুপ ও উদ্ধার অভিযানে থাকা নিখোঁজ জেলেদের স্বজনরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

 এদিকে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা জেলে পল্লীর আটজন ও রামপাল উপজেলায় দুজন জেলে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ থাকায় তাদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা ফরেস্ট স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও গত নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মাছ আহরণ মৌসুম। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দুবলার চরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লীতে সামুদ্রিক মাছ ধরতে আসেন প্রায় ৩০ হাজার  জেলে। এসব জেলে দুবলাসহ আটটি চরে অস্থায়ী বসতি গড়ে তোলেন।  সেখানে থেকেই তারা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরেন। দুবলার জেলে পল্লীর ফিশিং ট্রলার ছাড়াও ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ আহরণে সুন্দরবন উপকূলের মাছের খনি হিসেবে খ্যাত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে শত শত ফিশিং ট্রলার মাছ আহরণে থাকে। গত শুক্রবারও মাছ ধরার সময় হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে দুবলার চরের ৪৫ কিরোমিটার গভীর সাগরে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অন্তত ২৫টি ফিশিং ট্রলারডুবির খবর পাওয়া গেছে।

 

ডুবে যাওয়া এসব ফিশিং ট্রলারের মধ্যে দুবলার জেলে পল্লীর ৮টি এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা আলোরকোল শুঁটকি পল্লীর আরও ১০টি ফিশিং ট্রলার রয়েছে। অন্য ফিশিং ট্রলারগুলো ইলিশ আহরণে সাগরে ছিল। গতকাল বিকাল পর্যন্ত অন্য ট্রলারের সাহায্যে ১৫৪ জেলে ফিরে আসতে পারলেও ২৭ জেলে নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজদের সন্ধানে কোস্টগার্ডের দুটি জাহাজসহ দুবলার ১০০টি ট্রলার উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। বন বিভাগের এই কর্মকর্তা নিখোঁজদের মধ্যে বাগেরহাটের রামপালের দুর্গাপুর গ্রামের মো. দুধ্রসের ছেলে শাহিনুর ও ইসলামাবাদ গ্রামের মো. ছোট্টোর ছেলে মোতাচ্ছিনের নাম-পরিচয় জানাতে পেরেছেন। এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দুবলার চরের প্রায় ২ কোটি টাকার শুঁটকি নষ্ট হয়েছে বলেও জানিয়েছেন দুবলা ফরেস্ট ক্যাম্পের ওসি প্রহ্লাদ চন্দ্র রায়। বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি ফিশারি ঘাটের আড়তদার মেসার্স ফাইভ ব্রাদার্স অ্যান্ড সন্সের মৎস্য ব্যবসায়ী আবদুল বারিক জানান, শুক্রবার রাতে ঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের আড়তের ৩টি ফিশিং ট্রলার ডুবে ১১ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। এসব নিখোঁজ জেলের মধ্যে বাগেরহাটের কচুয়ার বগা গ্রামের আনিস সরদারের এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের ৭ জেলে, একই বগা গ্রামের ইলিয়াসের এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের ১ জেলে ও মঠবাড়িয়ার তুষখালীর হারুন মুন্সির এফবি জামিলা ট্রলারের ৩ জেলে রয়েছে। নিখোঁজ এই ১১ জেলের মধ্যে এফবি জামিলা ট্রলারের ৩ জেলে আলমগীর সরদার (৪৫), ইসমাইল (২০) ও বাচ্চুর (২৫) নাম জানাতে পেরেছেন তিনি। তাদের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার তুষখালীতে। নিখোঁজ অন্য ৮ জেলের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামে। নিখোঁজ জেলেদের স্বজনরা শুক্রবার মধ্যরাতে উদ্ধার অভিযান চালাতে সাগরে গেছেন বলেও জানান তিনি। এদিকে অভিযানে থাকা বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের জেলে মো. মোতালেব হোসেন বাবুল সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে দুই জেলের লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘কিছুক্ষণ আগে কচুয়া বগা গ্রামের আনিস সরদারের ডুবে যাওয়া এফবি মায়ের দোয়া ট্রলার থেকে আল মামুন শেখ (২৫) নামে এক জেলের লাশ উদ্ধার করে সুন্দরবনের দুবলার ভেদোরখালীতে নিয়ে আসা হয়েছে। হতভাগ্য আল মামুন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের আনোয়ার শেখের ছেলে। অন্যজন বাগেরহাটের রামপালের মোতাচ্ছিনের ফিশিং ট্রলারের এক জেলে। তিনি এই জেলের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি। তবে লাশ উদ্ধারের বিষয়টি সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে তাৎক্ষণিক কোস্টগার্ড জানাতে পারেনি। মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লুৎফর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে ভোর থেকে কোস্টগার্ড উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর যতক্ষণ সমুদ্রে দেখা যায় ততক্ষণ কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান চালাবে। আজ ভোর থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করবে কোস্টগার্ড। এদিকে গতকাল রাত ৮টায় পাওয়া সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহত দুই জেলে হলেন এফবি মা-বাবার দোয়া ট্রলারের মামুন (৪০) ও এফবি জামিলা ট্রলারের ইসমাইল (৩০)। মামুনের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কালীগঞ্জ ও ইসমাইলের বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার জানখালী গ্রামে।

সর্বশেষ খবর