সোমবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

আউটার রিং রোডে বদলে যাচ্ছে বন্দরনগরীর যানজট চিত্র

চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে বন্দর, সিইপিজেড, কেইপিজেড ও বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীর

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

আউটার রিং রোডে বদলে যাচ্ছে বন্দরনগরীর যানজট চিত্র

সমুদ্র উপকূলভাগের সাগরপাড় ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড। রোডটিকে প্রথম দর্শনে যে কেউ উন্নত বিশ্বের কোনো সড়ক ভেবে ভুল করবেন। অথচ এ রোডের নির্মাণকাজ এখনো পুরোপুরি শেষই হয়নি! এর পরও রোডটি যানজট মুক্ত হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর, পতেঙ্গা, ইপিজেড ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাতায়াতকারীদের অন্যতম ভরসায় পরিণত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দাবি, আউটার রিং রোড পুরোদমে চালু হলে বদলে যাবে নগরীর যানজট চিত্র। এ সড়ক চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে চট্টগ্রাম বন্দর, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীসহ মেগা সব প্রকল্পের।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে আউটার রিং রোডের কাজ শেষ করার প্রচেষ্টা চলছে। কারণ সরকারের চলমান দুই মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ আরও অনেক প্রকল্প যুক্ত হবে  রিং রোডের সঙ্গে। প্রকল্পগুলোর চালিকাশক্তি হবে এ রোড। তাই রিং রোডের কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করায় জোর দেওয়া হচ্ছে।’

আউটার রিং রোড নির্মাণকারী সংস্থা স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা দিদারুল আলম বলেন, ‘আউটার রিং রোড নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হবে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সিডিএকে কাজ হস্তান্তর করতে পারব।’

চট্টগ্রাম নগরীকে যানজট মুক্ত করতে পতেঙ্গা থেকে জেলার ফৌজদারহাট শুকতারা মোড় পর্যন্ত ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ সাগরপাড় ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে আউটার রিং রোড। রোডের কাজ শেষ না হলেও চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরমুখী গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে এ রুটে। আমদানি-রপ্তানি কাজে জড়িত গাড়িগুলো এ রোড ব্যবহারের ফলে যানজট মুক্ত ভাবে পণ্য পরিবহন করতে পারছে। আবার পণ্য পরিবহনকারী গাড়িগুলো নগরীতে প্রবেশ না করার ফলে চট্টগ্রাম নগরীর যানজট অনেকাংশই কমে এসেছে। রিং রোডের মূল সড়কের কাজ প্রায় শেষ হলেও নানা জটিলতার কারণে তিন ফিডার রোডের কাজ চলছে শ্লথগতিতে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে দুই ফিডার রোডের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। ফ্লাইওভারের উচ্চতা নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সম্মতিপত্র না পাওয়ায় শেষ করা যাচ্ছে না ফিডার রোড-৩-এর কাজ। দুই ফিডার রোডের কাজ শেষ হলে ইপিজেডসহ অন্যান্য কারখানার পণ্য পরিবহনের গাড়িগুলো নগরীর যানজট এগিয়ে চলাচল করতে পারবে।

শহর রক্ষার বাঁধ হিসেবে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে একনেকের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই বছরের জুলাই মাসে রিং রোড নির্মাণকাজ শুরু হয়। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। আউটার রিং রোড ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলসহ এলাকাসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা করবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনও নগরীতে প্রবেশ না করেই আনোয়ারা হয়ে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী পর্যন্ত চলে যেতে পারবে। ফলে নগরী যানজট মুক্ত হবে অনেকাংশে। একই সঙ্গে সিইপিজেড, কেইপিজেড ও মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে সিটি আউটার রিং রোড।

সর্বশেষ খবর