শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

এখনো নতুন বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী

আকতারুজ্জামান

নীলফামারী জেলা সদরে রামগঞ্জ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর কেউ-ই নতুন বছরে কোনো বই পায়নি। অন্য শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা কয়েকটি বই পেলেও সব বই পায়নি তারা। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুবাস চন্দ্র জানান, ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীরা একটি বইও পায়নি। কবে পাবে সেটিও বলতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, সপ্তম, অষ্টম, নবম কোনো শ্রেণিতেই পুরো বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ইয়াসির আরাফাত জানায়, বছরের শুরুতে স্কুলে ভর্তি হলেও এখনো কোনো বই পাইনি। তাই পড়াশোনাও শুরু করা হয়নি। ইয়াসির আরাফাতের অভিভাবক শামীমুল ইসলাম বলেন, একে তো স্কুল বন্ধ তার ওপর দেড় মাসেও কোনো বই পায়নি ছাত্ররা। এই ছাত্ররা এখন অনেকটা ভবঘুরের মতো হয়ে যাচ্ছে। নীলফামারী সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আহমদ আহসান হাবিব প্রতিবেদককে বলেন, বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীরা সব বই পায়নি। উপজেলার অনেক স্কুলেই এমন চিত্র। বই পেলেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক উপজেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, রংপুর বিভাগের কোনো জেলায়ই মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীরা সব বই পায়নি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বিভাগীয় সভায় উপস্থিত শিক্ষা অফিসাররা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, নতুন বছর শুরুর পর প্রায় দেড় মাস পার হতে চললেও দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা এখনো সব বই হাতে পায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এ সময়ে সব বই না পেয়ে শিক্ষার্থীরা বাড়িতেও পড়াশোনা শুরু করতে পারছে না।

রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রাজশাহীতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এখনো সব বই হাতে পায়নি। কোনো কোনো স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গণিত, পদার্থ কিংবা রসায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো পায়নি। জানা গেছে, রাজশাহীতে সব মিলিয়ে বইয়ের প্রয়োজন ৪৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৮৫টি। এর মধ্যে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ৬২০টি বই পাওয়া গেছে। বাকি ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬৫টি বই এখনো আসেনি। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে বলে বলছেন অভিভাবকরা। গোদাগাড়ী উপজেলার শিক্ষার্থীরা গড়ে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ বই পেয়েছে। সবচেয়ে কম, ৫০ শতাংশ বই পেয়েছে পবা উপজেলার শিক্ষার্থীরা। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, এখনো বই না আসার কারণে আমরা স্কুলে স্কুলে পৌঁছাতে পারিনি।

ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির বেশকিছু বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। এ স্কুলে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে বলেন- অষ্টম শ্রেণির বাংলা, গণিত, বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মকবুল হোসেন প্রধান বলেন, অষ্টম-নবম শ্রেণির কয়েকটি বই এখনো বিতরণ করা হয়নি। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। কালিগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মধুসূদন সাহা প্রতিবেদককে বলেন, নবম শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার বই এখনো আসেনি। অষ্টম শ্রেণিতেও কয়েকটি বই পায়নি এ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সদর ও বন্দর উপজেলায় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বেশিরভাগ বই বাকি রয়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোনো বই-ই দেওয়া হয়নি। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহিন্দ্র কুমার ম ল প্রতিবেদককে জানান, পঞ্চম শ্রেণির কিছু বই এখনো এসে পৌঁছেনি। বই পেলেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছে যাবে।

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুলে-মাদরাসায় ছাত্রছাত্রীরা সব বই না পাওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট ছাপাখানাগুলো থেকে ছাপা শেষে সব বই ছাড় করা হয়েছে। তবে, ছাত্রছাত্রীরা এখনো বই না পাওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রছাত্রীরা বই পায়নি এমন হওয়ার কথা নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একটি সূত্র জানায়, কয়েকটি ছাপাখানা যথাসময়ে বই সরবরাহ না করার কারণেই ফেব্রুয়ারিতে এসেও বই পায়নি ছাত্রছাত্রীরা। এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০টি বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই ছাপার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয় গত বছরের ৯ নভেম্বর। আর প্রাক প্রাথমিকের ৩৩ লাখ দুই হাজার ৭৪০টি বই ছাপাতে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। বই ছাপা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালক্ষেপণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে বিলম্ব হওয়া, দফায় দফায় টেন্ডার বাতিল, দেরিতে কার্যাদেশ দেওয়ার কারণে বই পৌঁছতে বিলম্ব হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

সর্বশেষ খবর