সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
গবেষণা প্রতিবেদন

ক্ষীণ দৃষ্টিতে ভুগছেন নারী পোশাক শ্রমিক

জিন্নাতুন নূর

ক্ষীণ দৃষ্টিতে ভুগছেন নারী পোশাক শ্রমিক

দেশের নারী পোশাক শ্রমিকরা ক্ষীণ দৃষ্টির সমস্যায় ভুগছেন। শহরের তুলনায় গ্রামের পোশাক কারখানাগুলোতে কর্মরত নারী শ্রমিকরা বেশি ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন। ক্ষীণ দৃষ্টির কারণে নারী শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। ফলে তারা অপেক্ষাকৃত কম উপার্জন করছেন। 

রাজধানীর বাইরের কারখানার নারী শ্রমিকদের মাসিক উপার্জনও তুলনামূলক কম। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, গ্রামের ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ নারী শ্রমিক ক্ষীণ দৃষ্টিতে ভুগছেন। শহর এলাকায় ১৯ শতাংশ নারী এ সমস্যায় ভুগছেন। সম্প্রতি এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব অপথালমোলজির একটি বিশেষ সংখ্যায় এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘ভিশন ইমপেয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকটিভিটি এমোংগ ফিমেইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় এমনটি উঠে এসেছে। গবেষণায়           আরও বলা হয়, চোখের ভালো যত্ন নেওয়া হলে নারী শ্রমিকদের মাসিক উপার্জন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে। অরবিস বাংলাদেশ এবং নারী উদ্যোগ কেন্দ্র দেশের চারটি পোশাক কারখানায় ২০১৯ সালে এই গবেষণাটি চালায়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকার দুটি এবং ময়মনসিংহের দুটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের চোখ পরীক্ষা করে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। দেশের ৪০ লাখ পোশাক শ্রমিকের মধ্যে অর্ধেকই নারী শ্রমিক। গার্মেন্টে একজন নারী শ্রমিককে সেলাই, কাটিংয়ের মতো সুক্ষ্ম কাজ করতে হয়। এ জন্য একজন শ্রমিকের কাছের দৃষ্টিশক্তিও ভালো থাকতে হয়। গবেষণায় দেখা যায়, শহরের বাইরের পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা ক্ষীণ দৃষ্টিতে বেশি ভুগছেন। এর ফলে এই শ্রমিকরা যে বেতন পাচ্ছেন তা তুলনামূলক কম। কারণ ক্ষীণ দৃষ্টির কারণে তাদের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, নারীদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারী পোশাক শ্রমিকরা এই সমস্যায় বেশি ভুগছেন। এই গবেষণায় মোট ৯১৫টি পোশাক শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। যাদের সবাই নারী। এদের বয়স ১৮ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। যার মধ্যে ২৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২৬ দশমিক ৮ শতাংশের যথাক্রমে দূরদৃষ্টি ও ক্ষীণ দৃষ্টির সমস্যা নেই। গ্রামের ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ নারী শ্রমিক ক্ষীণ দৃষ্টিতে ভুগছেন। যেখানে শহর এলাকায় ১৯ শতাংশ নারী এ সমস্যায় ভুগছেন। গ্রামে ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন নারীরা যেখানে মাসে প্রায় ১৪ মার্কিন ডলার উপার্জন করেন সেখানে শহরের ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন নারীরা মাসে প্রায় ৪১ মার্কিন ডলার অর্থ উপার্জন করেন।  সাধারণত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার জন্য শ্রমিকরা চোখের চিকিৎসায় অর্থ ব্যয় করতে হিমশিম খান। এমনকি তারা এ সংক্রান্ত যথাযথ চিকিৎসাসেবা গ্রহণের সুযোগও পান না। গবেষণাটিতে এ সমস্যা সমাধানে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের দৃষ্টিশক্তি ভালো আছে কি না তার নজরদারি বৃদ্ধির প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, এ সমস্যার সমাধান হলে একজন নারী শ্রমিক বছরে ৭০ মার্কিন ডলার বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর