সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রেমের ফাঁদ পেতে ব্ল্যাকমেলিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেসবুকেই পরিচয়। একে একে মন দেয়া-নেয়া। একপর্যায়ে প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া। কিছুদিনের মধ্যেই একান্ত সময় কাটাতে প্রেমিকার বাসায় যাওয়ার পর থেকে উল্টে যেতে থাকে পিরামিড। পুলিশরূপী কোনো ব্যক্তির আগমন। সবশেষে মানসম্মান রক্ষায় তাদের চাহিদা পূরণ করেই মুক্তি মেলে প্রতারণার শিকার প্রেমিকের।

তবে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ধারণ করার কারণে দিনের পর দিন চলতে থাকে প্রতারক চক্রের ব্ল্যাকমেলিং। এমন একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ খুঁজে পায় ভয়ংকর এই গ্যাংকে। শনিবার রাজধানীর মুগদা ও বাড্ডা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় প্রতারক দম্পতি মো. টুটুল ও নাসিমা আক্তার এবং তাদের সহযোগী মো. মোশারফ হোসেন শুভ ও আবজল মিয়াকে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার অন্তত ৩০ জন। ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টুটুল অপকর্মের জন্য স্ত্রীকে ব্যবহার করতেন। মধ্যবয়সী প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের টার্গেট করতো ওরা। ভুক্তভোগীরাও তাদের ফাঁদে পা দিতেন একটু বাড়তি মজা নেয়ার জন্য। তবে আমরা অতীতের মতো আবারও অনুরোধ করবো, যাচাই-বাছাই না করে কারো ফাঁদে পা দেবেন না।’

জানা গেছে, টুটুল-নাসিমা দম্পতি মিলে তৈরি করেছিল প্রতারণার সা¤্রাজ্য। তাদের বাসা বাড্ডা এলাকায়। ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে মধ্যবয়সী মানুষকে প্রেমের ফাঁদে ফাঁসাতেন নাসিমা। এরপর সেই ব্যক্তিকে বাসায় এনে আপত্তিকর অবস্থায় ফেলে ব্ল্যাকমেইল করতেন টুটুল ও তার দুই সহযোগী। ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত তারা এমন প্রতারণা করে আসছিলেন। নাসিমা ফেসবুকে আইডি খুলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের। এরপর সেই ব্যক্তির সঙ্গে মেসেঞ্জারে আলাপের পর ভিডিও কলে কথা বলতেন নাসিমা। পরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে আনতেন। নিজের বেডরুমে নিয়ে জড়াতেন আপত্তিকর অবস্থায়। গোপনে এসব দৃশ্য ভিডিও করা হতো। তখনই পরিকল্পনামাফিক পুলিশ পরিচয়ে হাজির হতেন তার স্বামী টুটুল। সঙ্গে থাকত সাংবাদিক পরিচয়ধারী আরো কয়েকজন। সম্প্রতি এভাবেই এই চক্রের কাছে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন একটি বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে তিনি প্রতারকদের পাঁচ লাখ টাক দিয়েছেন। তাকে আরো পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলো তারা। এ ধরনের আরো একটি ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় এই চক্রের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে।

ডিসি মশিউর বলেন, প্রতারকরা ধারণ করা ভিডিও ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। ভিকটিম টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করে এবং তার কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড এবং কার্ডের পিন নম্বর নিয়ে নেয়। এ ছাড়া ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের ফোন করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দেয়। ভিকটিম আত্মসম্মানের ভয়ে তাদের সব দাবি মানতে বাধ্য হন।

সর্বশেষ খবর