শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বাড়ছে দর্শনার্থী, বিক্রিও

মোস্তফা মতিহার

বাড়ছে দর্শনার্থী, বিক্রিও

প্রকৃতির হিসাবে শীতের বিদায় হয়েছে দুই দিন আগে। কিন্তু স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বসন্তের বাতাসে শীতের দাপট ছিল লক্ষ্য করার মতো। একদিকে কোকিলের কুহুতান অন্যদিকে শীতের উপস্থিতি ভিন্ন এক আবহের সৃষ্টি করেছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিনের বিকালে। শীত-বসন্তের লুকোচুরিতে বইপ্রেমীদের আগমন ও পছন্দের বই কেনার মধ্য দিয়ে জমজমাট ছিল এ দিনের মেলা। দুপুরে মেলার প্রবেশদ্বার উন্মোচনের পর লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। বিকালের দিকে বাড়তে থাকে ভিড়। সন্ধ্যায় সপরিবারে মেলায় এসে বইপ্রেমীরা মেলাকে প্রাণবন্ত করেন। কেউ কেউ স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে ঘুরে প্রিয় লেখকের পছন্দের বইটি কিনেছেন। কেউ পরে কিনবেন বলে এ বছরের নতুন বইয়ের ক্যাটালগ সংগ্রহের মধ্য দিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। এমন দৃশ্য দেখে এবারের মেলা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক। এর মধ্যে অনন্যার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক বলেন, ‘এবার শুরু থেকেই মেলা জমে উঠেছে। গত দুই দিনের ধারাবাহিকতায় আজ (গতকাল) তৃতীয় দিনেও বইপ্রেমীদের উপস্থিতি আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে। দর্শনার্থীরা মেলায় ভিড় করছেন, বইও কিনছেন। এটা একুশের চেতনা ও বইমেলার জন্য ইতিবাচক দিক।’ নালন্দার প্রকাশক রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘সপরিবারে মানুষ মেলায় আসছে দেখে খুবই ভালো লাগছে। বইয়ের প্রতি অনুরাগ মানুষকে ঘরবন্দি রাখতে পারেনি।’ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি নানা শর্ত দিলেও কিছুই মানা হচ্ছে না বইমেলায়। প্রবেশদ্বারে কড়াকড়ি থাকলেও মেলাপ্রাঙ্গণের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথে মাস্ক পরিধান করিয়ে, শরীরের তাপমাত্রা মেপে ও হাত স্যানিটাইজ করে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করানো হলেও মেলায় প্রবেশ করেই মাস্ক খুলে ফেলছেন বেশির ভাগ মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ভিতরে ও বাইরের চিত্র দ্ইু রকম। এ বিষয়ে মেলায় আগত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বর্ষা আলমগীর বলেন, ‘গতবারও মাস্ক ও গ্লাভস পরেই মেলায় এসেছিলাম। এবারও সে রকমের সতর্কতা অবলম্বন করেই এসেছি। দেখা যাচ্ছে আমি সতর্কতা অবলম্বন করলেও অনেকেই তা মানছেন না। স্বাস্থ্যবিধি না মানার লাগাম যদি এখনই টেনে ধরা না হয় তাহলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।’

নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে গতকাল মেলার তৃতীয় দিনে নতুন বই এসেছে ৪১টি। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি থেকে আনোয়ারা সৈয়দ হকের কিশোর জীবনীগ্র্রন্থ ‘ছোটদের বঙ্গমাতা’, আগামী প্রকাশনী এনেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের শিল্পকলাবিষয়ক গ্রন্থ ‘সবার জন্য নন্দনতত্ত্ব’, আনোয়ারা সৈয়দ হকের গবেষণামূলক প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বঙ্গমাতা ও দুই কন্যার কথা’, কিংবদন্তি পাবলিকেশন থেকে ড. জালাল ফিরোজের গবেষণাগ্রন্থ ‘পার্লামেন্ট কীভাবে কাজ করে : বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা’, বেহুলা বাংলা থেকে সোহরাব পাশার কাব্যগ্রন্থ ‘নিদ্রিত পাখির গান’, সপ্তবর্ণ থেকে মোহাম্মদ আবদুল হালিমের ভ্রমণবিষয়ক বই ‘সুদান মিশনে মুজিববর্ষ’ উল্লেখযোগ্য।

মূল মঞ্চ : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও নাটক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাবুল বিশ্বাস ও মোমিন রহমান। আলোচনায় অংশ নেন অরুণা বিশ্বাস ও সাজ্জাদ বকুল। সভাপতিত্ব করেন রামেন্দু মজুমদার। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা, আলতাফ হোসেন, শিহাব সরকার, রেজাউদ্দিন স্টালিন, অঞ্জনা সাহা। আবৃত্তি করেন মো. রফিকুল ইসলাম, ঝর্ণা সরকার ও ইকবাল খোরশেদ। দলীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’ ও বুলবুল ললিতকলা একাডেমির শিল্পীরা।

বইমেলায় পরমাণু প্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী দর্শনার্থী : বিজ্ঞান, বিশেষ করে পরমাণু বিজ্ঞান সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর প্রসারে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন একুশে বইমেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে সহায়তা করছে রাশিয়ার পরমাণু শক্তি করপোরেশন, রসাটম। পরমাণু শক্তি কমিশনের স্টলে মেলার প্রথম দিন থেকেই দর্শনার্থী, বিশেষ করে শিশুদের ভিড় দেখা গেছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৭১২ ও ৭১৩ নম্বর স্টলে দর্শনার্থীরা পরমাণু বিজ্ঞান বিষয়ে মজাদার গেইমস এবং কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। জিতে নিচ্ছেন আকর্ষণীয় স্যুভেনির। আগ্রহী দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে বিষয়ভিত্তিক বাংলা বই দেওয়া হচ্ছে। স্টলে খুদে পাওয়ার মডেলের সাহায্যে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তা দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। পরমাণু বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে ইচ্ছুকদের জন্য রয়েছে তথ্যসমৃদ্ধ ভিডিও। মেলায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং ঢাকার পরমাণু শক্তি তথ্য কেন্দ্রের প্রশিক্ষিত নবীন কর্মকর্তারা দর্শনার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর