তৈরি পোশাক রপ্তানির পর ত্রুটির কারণে তা ফেরত এলে ওই পণ্য বন্দর থেকে খালাস ও পুনঃ রপ্তানির জন্য শুল্ক কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি নিতে হয়, নতুন আমদানি নীতিতে এ অনাপত্তির আর দরকার পড়বে না; কেবল লিয়েন ব্যাংকের প্রত্যয়ন নিলেই ত্রুটিপূর্ণ পণ্য খালাস ও পুনঃ রপ্তানির সুযোগ পাওয়া যাবে। নতুন আমদানি নীতিতে রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিতে এ ধরনের বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, কিছু পর্যালোচনা দিয়ে গত সপ্তাহে তিন বছরের জন্য আমদানি নীতি আদেশ, ২০২১-২৪-এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নির্দেশিত সংশোধনের পর নীতিটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পুনরায় মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। এরপর এর গেজেট জারি হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তৈরি পোশাক রপ্তানির পর পণ্যের ত্রুটি ধরে যখন ক্রেতারা মাল ফেরত পাঠায় তখন তা বন্দর থেকে ছাড় করার ক্ষেত্রে শুল্ক দফতরের অনাপত্তি নিতে হয়। এসব পণ্য পুনঃ রপ্তানির ক্ষেত্রে আবার লিয়েন ব্যাংকের ছাড়পত্র নিতে হয়। বারবার এ ধরনের ছাড়পত্র আর প্রত্যয়ন সংগ্রহ করতে গিয়ে রপ্তানিকারকরা হয়রানির শিকার হন। এসব বিষয় বিবেচনা করে শুল্ক কর্তৃপক্ষের অনাপত্তির বিষয়টি আমদানি নীতি থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুধু ব্যাংকের প্রত্যয়ন থাকলেই ত্রুটিপূর্ণ পণ্য ছাড় বা পুনঃ রপ্তানি করা যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘নতুন আমদানি নীতি কেবল আমদানিকারক নয়, রপ্তানিকারকদের জন্যও অনেক সুফল বয়ে আনবে। আগের আমদানি নীতি থেকে এবার অনেক ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে সরকারি দফতরের ছাড়পত্র আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে জটিলতা তৈরি করে, ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।’আরও যেসব পরিবর্তন আসছে আমদানি নীতিতে : শিল্পের মেশিনারি, ইকুইপমেন্ট বা সিলিন্ডার মেরামত, রি-ফিলিং বা মেইনটেন্যান্সের জন্য বিদেশে পাঠাতে চাইলে বর্তমানে ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াও আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের অনুমোদন নিতে হতো; নতুন নীতিতে অনুমোদন নিতে হবে না। মূল্য সংযোজন হার কমল : বর্তমান নীতিতে নিট পোশাক, নন কোটার ওভেন পোশাক এবং কোটা ক্যাটাগরির ওভেন পোশাকে প্রতি ডজনের রপ্তানি মূল্য (এফওবি) ৪০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত মূল্য সংযোজনের ন্যূনতম হার ছিল শতকরা ২০ ভাগ; নতুন নীতিতে ওভেন ও নিট পোশাকের রপ্তানি মূল্য প্রতি ডজন (এফওবি) ৬০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত মূল্য সংযোজন হার শতকরা ২০ ভাগ ধরা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি ডজন ৬০ মার্কিন ডলারের ওপরে ওভেন ও নিট মূল্যের পোশাকে মূল্য সংযোজন হার কমিয়ে শতকরা ১০ ভাগ করা হয়েছে। বন্ডেড ওয়্যারহাউসে ছয় মাসের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ : এ পদ্ধতির আওতায় শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে অথবা ক্রেতা কর্তৃক নিশ্চিত চুক্তির আওতায় চার মাসের বদলে ছয় মাসের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, মোড়কসামগ্রী আমদানি করতে পারবে। স্থানীয় উৎপাদনকারী শিল্পকে সুবিধা দিতে নতুন ধারা : এ ধরনের শিল্পকে রপ্তানিতে উৎসাহ দিতে অভ্যন্তরীণ বিপণনের পাশাপাশি আংশিক রপ্তানি পণ্যের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে আমদানির সুযোগ থাকবে। ইউটিলাইজেশন পারমিশনের ভিত্তিতে শুল্ক কর্তৃপক্ষ এ ধরনের আমদানি পণ্যের ছাড়পত্র দেবেন। রপ্তানির উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত কাঁচামাল দ্বারা রপ্তানি পণ্যের মূল্য সংযোজন হার ট্যারিফ কমিশন নির্ধারণ করবে। স্থানীয় উৎপাদনকারী শিল্পকে সুবিধা দিতে আমদানি নীতিতে নতুন এ ধারাটি যুক্ত করা হয়েছে।
মাদার ভেসেল থেকে সরাসরি ক্রুড সয়াবিন খালাসের সুযোগ : নতুন নীতিতে আমদানিকারকরা যথাযথ শুল্ক পরিশোধ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে মাদার ভেসেল থেকে সরাসরি ক্রুড সয়াবিন ও পাম অলিন খালাসের সুযোগ পাবেন। বর্তমান নীতিতে মাদার ভেসেল থেকে সরাসরি ক্রুড সয়াবিন ও পাম অলিন খালাসের সুযোগ নেই। পুরনো ক্রুজ জাহাজ, বিমান, হেলিকপ্টার আমদানির সুযোগ : বর্তমান নীতির মতোই নতুন নীতিতে ২৫ বছরের পুরনো সমুদ্রগামী জাহাজ, অয়েল ট্যাংকার ও মৎস্য ট্রলার আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির ফিটনেস সনদ সাপেক্ষে যে কোনো বয়সসীমার আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ক্রুজ জাহাজ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে আমদানির অনুমতির সুযোগ দিয়ে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নতুন কিংবা পুরনো যে কোনো ধরনের বিমান/হেলিকপ্টার বা তার যন্ত্রাংশ আমদানিরও একটি ধারা যুক্ত হয়েছে। অ্যালকোহল ও লবণ আমদানির সুযোগ : বর্তমান নীতিতে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী হোটেল এক বছরে অর্জিত মুদ্রার শতকরা সাড়ে ৭ ভাগের অর্থ দিয়ে অ্যালকোহল বেভারেজ আমদানি করতে পারে। নতুন নীতিতে অর্জিত মুদ্রার শতকরা ১২ ভাগ অর্থ দিয়ে অ্যালকোহলিক বেভারেজ আমদানির সুযোগ পাবে। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লাইসেন্স সাপেক্ষে ক্লাব, রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট, মোটেল ও বার সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন সাপেক্ষে মদ ও বিয়ার আমদানি করতে পারবে। এ ছাড়া বর্তমান নীতিতে সাধারণ (খাবার) লবণ আমদানির সুযোগ না থাকলেও নতুন নীতিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী লবণ উৎপাদন না হলে বা দেশে ঘাটতি দেখা দিলে শর্ত সাপেক্ষে পণ্যটি আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছে।