বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সাবধান! হজ নিয়ে প্রতারক চক্র সক্রিয়

হাতিয়ে নিচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা

সাখাওয়াত কাওসার

‘সরকারিভাবে হজ পালনের জন্য আপনাকে সিলেক্ট করা হয়েছে। আমি পাবনা-৪ আসনের এমপির পিএস বলছি। খুব কমসংখ্যক মানুষ এমন সুযোগ পাচ্ছেন। আপনি অনেক ভাগ্যবান। আপনাকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজনের নম্বর দিচ্ছি। আপনি দ্রুত তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ পিএস পরিচয়ধারী ওই ব্যক্তি ৩১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফোন করেছিলেন পাবনার আটঘরিয়া পারখিজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফতাব হোসেনকে। কিছুক্ষণ পর আফতাব হোসেনও কথা বলেন প্রথম ব্যক্তির দেওয়া ফোন নম্বরে। ওই ব্যক্তিও আফতাব হোসেনকে স্বাগতম জানিয়ে একটি বিকাশ নম্বরে সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিতে বলেন। এ তো গেল মাত্র একটি ঘটনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন পেশার মানুষদের ফোন দিচ্ছে এ প্রতারক চক্রের সদস্যরা। অনেককে বোকা বানিয়ে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। ভুক্তভোগীদের অনেকে প্রতারিত হওয়ার পর লজ্জায় কাউকে কিছু বলছেনও না। তবে তাদের কেউ কেউ ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন। এমন খবরে নড়েচড়ে বসে ধর্ম মন্ত্রণালয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  ‘আমরা বিষয়টি এখনই অবহিত হলাম। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে ডিবি-ডিএমপি সব সময়ই জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ করে আসছে। অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে।’ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণের বহির্বিশ্ব থেকে  হজ ও ওমরাহ কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে ওমরাহ কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে। হজে যাওয়ার নিবন্ধন কার্যক্রম অদ্যাবধি বন্ধ রয়েছে। এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজের নিবন্ধন-সংক্রান্ত কোনো কাজের অনুমোদন এখনো দেওয়া হয়নি। তবে হজের প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিন্তু হজে নেওয়ার কথা বলে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের প্রতারণার কিছু তথ্য দেওয়া হলো।

চঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারি এক ব্যক্তি (মোবাইল নম্বর ০১৮৮৬৯৬৫২১৫) সরকারিভাবে হজে প্রেরণের লক্ষ্যে নিবন্ধনের কথা বলে মো. আফতাব হোসেনের কাছে সাত হাজার টাকা দাবি করে ফোন করেন। কিছুদিন ধরে এম এ হায়দার (০১৮১৬৮৪০৩৫৫৮) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে দেশের সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সরকারিভাবে  হজে পাঠানোর কথা বলে অর্থ চেয়ে প্রতারণা করে আসছেন। অনেকেই প্রতারণার খপ্পরে পড়ে অর্থ প্রদান করেছেন মর্মে জানা যায়। হজের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও প্রলুব্ধ করে মোবাইল ফোনে টাকা চাওয়া প্রতারণার শামিল এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বর্ণিত বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ১০টা ৩০-এর মধ্যে টেলিফোন নম্বর ৯৫৪৬৫৯০ থেকে মোবাইল নম্বর ০১৮৮৬৯৬৫২১৫-তে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এ ধরনের প্রতারকরা একেক সময় একেকটি মোবাইল সিম ব্যবহার করে। প্রতারকরা বারবার বিভিন্ন মোবাইল সিম ব্যবহার করার কারণে তাদের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। প্রতারকদের এহেন কার্যক্রমে সরলপ্রাণ মুসলমানদের মনে পবিত্র হজ এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় স¤পর্কে ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া নিরীহ সাধারণ জনগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায় ওপরে বর্ণিত দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীসহ (০১৮৮৬৯৬৫২১৫ ও ০১৮১৬৮৪০৩৫৫৮) হজ নিয়ে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

এ বিষয়ে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদত হোসেন তসলিম বলেন, এ ধরনের প্রতারণা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। ধর্মপ্রাণ মানুষ যাতে প্রতারণায় না পড়েন সে জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের প্রতারকদের জন্য যাতে হাব ইমেজ সংকটে না পড়ে সে জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর