শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

সমাগম কমলেও বিক্রি কমেনি

মোস্তফা মতিহার

সমাগম কমলেও বিক্রি কমেনি

শুরু থেকেই জমে উঠেছিল এবারের অমর একুশে বইমেলা। প্রথম দিন থেকেই ছিল মানুষের জটলা। একুশে ফেব্রুয়ারিতে সেটি জনসমুদ্রে রূপ নেয়। শুরু থেকে আশানুরূপ বিক্রিতে প্রকাশকরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলেন। লেখক ও প্রকাশকদের ধারণা ছিল একুশে ফেব্রুয়ারির পর মেলায় হয়তো বইপ্রেমীদের ভাটা পড়বে, কিংবা বিক্রিতে ছন্দপতন ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে এর উল্টোটা।

প্রকাশকদের বড় একটা অংশ জানান, লোকসমাগম কিছুটা কমলেও একেবারে কমে যায়নি। যে পরিমাণ মানুষ মেলায় আসছেন, এই পরিমাণ মানুষই যদি প্রতিদিন আসেন- তাহলে মেলা ব্যবসায়িকভাবে সফল হবে। তারা বলেন, লোকসমাগম এক দিন একটু বেশি হবে, আরেক দিন কম হবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে, হুট করে ছন্দপতন ঘটেনি। বাঁধন প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শেখ শাহারুল আলম বলেন, এবারের মেলায় প্রায় সব প্রকাশকই ভালো বিক্রি করছেন। অন্যান্য বার কেউ অনেক বিক্রি করতেন, আর কেউ বিক্রিই করতে পারতেন না। এবারের মেলায় কিন্তু তা ঘটেনি। এবারের বিক্রি একটা সামঞ্জস্যতার মধ্যেই আছে। মোটকথা যার কাছে ভালো বই আছে তার বিক্রি ভালো হচ্ছে। পারিজাত প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী এমি আক্তার বলেন, মেলা জমে উঠেছে দেখে ভালোই লাগছে। অন্যান্য বার মাঝামাঝি সময়ে মেলা তার ছন্দ হারালেও এবার কিন্তু সে রকমটি হয়নি। আশা করছি এবারের মেলা একটি সফল মেলার কাতারে উন্নীত হবে। বিকালে মেলায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতি আবু তালেব। তরুণ এই শিক্ষার্থী বলেন, মেলায় এসে খুবই ভালো লাগছে। পরিবেশটাও খুব সুন্দর। পছন্দের কিছু বই কিনলাম। কয়েক দিন পর আবার আসব। এখনো হলে উঠিনি। বাসায় থাকি বলে প্রতিদিন আসা হয় না। হলে থাকলে আসা হতো।

সৈয়দ শামসুল হক রচনাসমগ্র : প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য ৩৫ খন্ডে প্রকাশ করেছে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের রচনাসমগ্র। বাংলা সাহিত্য এবং  প্রকাশনার ইতিহাসে ১৯ হাজার ১১২ পৃষ্ঠার এই অসামান্য সংগ্রহটি গতকাল লেখকের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন প্রকাশক আরিফুর রহমান নাঈম। লেখকের গুলশানের বাসভবনের এই অনুষ্ঠানে  এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হকের পত্নী আনোয়ারা সৈয়দ হক, পুত্র দ্বিতীয় সৈয়দ হক, ঐতিহ্য-এর প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাঈম। দুর্লভ এই সংগ্রহটি একুশে বইমেলায় ঐতিহ্যের প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে।

আলম শাইনের লাল সংকেতে জলবায়ু : আলম শাইনের জলবায়ুবিষয়ক গ্রন্থ ‘লাল সংকেতে জলবায়ু’। বইটি প্রকাশ করেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনী সংস্থা ‘স্টুডেন্ট ওয়েজ’। মোট ৫০টি প্রবন্ধ রয়েছে বইয়ে। প্রবন্ধগুলো দেশের প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় ছাপা হয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন কাব্য কারিম। ১৮৪ পৃষ্ঠার বইয়ের মূল্য ধার্য করা হয়েছে ৩০০ টাকা।

 

নতুন বই : গতকাল বইমেলার ১৭তম দিনে নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১০৮টি। এর মধ্যে গল্পের বই ১৮টি, উপন্যাস ১২টি, প্রবন্ধ ২টি, কবিতা ৬০টি, গবেষণা ২টি, ছড়া ১টি, শিশুসাহিত্য ১টি, মুক্তিযুদ্ধ ১টি, ভ্রমণ ১টি, রাজনীতির বই ২টি, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক ১টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর ৫টি। এ দিনের উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো-বাংলা একাডেমি প্রকাশিত এহসান চৌধুরী অনূদিত ‘ফরাসি রূপকথা’, শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত ফোকলোর বই ‘বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা : ময়মনসিংহ’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে হাবিবুল্লাহ ফাহাদের গল্পের বই ‘খৈয়া গোখরার ফণা’, কাশবন প্রকাশন এনেছে মুহম্মদ নূরুল হুদার কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসার বুকপকেটে’, রিদম প্রকাশনা সংস্থা এনেছে আসাদুজ্জামান ফারুকের ‘সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার অজানা কথা’, আগামী এনেছে অনুপম হীরা মন্ডলের ‘বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথ’,  গ্রন্থকুটির বের করেছে আমিরুল ইসলাম আমিরের শিশুতোষ বই ‘মু-ুকাটা ভূত’, নাগরী           এনেছে মনজুরুল হকের রাজনীতিবিষয়ক বই ‘মিয়ানমার জিও-পলিটিক্সের রেসের ঘোড়া’, ও আন্দালিব রাশদীর উপন্যাস ‘স্পেয়ার মানুষ’, নবযুগ প্রকাশনী এনেছে সোহরাব হাসানের বঙ্গবন্ধুবিষয়ক বই ‘আগরতলায় শেখ মুজিবের গোপন সফর’ ইত্যাদি।

আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : মোহাম্মদ আবদুল কাইউম ও বশীর আল্হেলাল’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসান হাফিজ। আলোচনায় অংশ নেন মো. মুমিত আল রশিদ এবং পারভেজ হোসেন। সভাপতিত্ব করেন মোরশেদ শফিউল হাসান।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি জরিনা আখতার এবং রহিমা আখতার কল্পনা। একক সংগীত পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল, লীনা তাপসী খান, সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, কামাল আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, শাহনাজ নাসরিন ইলা, মো. হারুনুর রশিদ এবং সুমন মজুমদার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর