শনিবার, ৫ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

টিকায় এগিয়ে ঢাকা পিছিয়ে সিলেট

জয়শ্রী ভাদুড়ী, ঢাকা ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

টিকায় এগিয়ে ঢাকা পিছিয়ে সিলেট

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী প্রথম, দ্বিতীয় ডোজের পাশাপাশি চলছে বুস্টার ডোজের টিকাদান। এ পর্যন্ত ৭২ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ, ৪৯ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ এবং ৪ শতাংশ মানুষ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিভাগে। সবচেয়ে কম টিকা দেওয়া হয়েছে সিলেট বিভাগে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ড্যাশবোর্ডে দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ঢাকা বিভাগে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭৯ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। খুলনা বিভাগে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭০ দশমিক ৮০ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭০ দশমিক ১০ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। রংপুর বিভাগে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৬৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৬৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫২ দশমিক ৭০ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৬৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৭ দশমিক ১০ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৬৬ দশমিক ৮০ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৬ দশমিক ২০ শতাংশ। সিলেট বিভাগে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৬৫ দশমিক ৮০ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ। টিকা দেওয়ার হিসাবে দেখা যায় ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি          টিকা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগে ১৩টি জেলা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চ ৮৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ টিকা নিয়েছেন। এরপর নারায়ণগঞ্জে ৮১ দশমিক ৩ শতাংশ, নরসিংদীতে টিকা নিয়েছেন ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ, মানিকগঞ্জে টিকা নিয়েছেন ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ, রাজবাড়ীতে টিকা নিয়েছেন ৬৯ দশমিক ৩ শতাংশ, ফরিদপুরে ৬২ শতাংশ, মাদারীপুরে ৬২ দশমিক ৬ শতাংশ, শরীয়তপুরে ৬৫ শতাংশ, মুন্সীগঞ্জে ৭৩ দশমিক ৩ শতাংশ, গাজীপুরে ১১৩ শতাংশ, কিশোরগঞ্জে ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ, টাঙ্গাইলে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ, গোপালগঞ্জে ৮২ দশমিক ৮ শতাংশ।   

করোনা প্রতিরোধী টিকাদানে দেশের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে সিলেট বিভাগ। নগরে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হলেও গ্রামে সেই হার অনেক কম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ১৭ লাখ ৯ হাজার ৪৬৪ জন। শুরুতে মোট জনসংখ্যা ৭০ ভাগকে টিকার আওতায় নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই হিসেবে টিকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৫ জনে। পরবর্তীতে ১২ বছরের ঊর্ধ্বে শিশুদের টিকার আওতায় আনলে আরও ৮ লাখ ৪ হাজার ৯০১ শিশু টিকার আওতায় আসে। সবমিলিয়ে বিভাগে টিকার আওতায় আসে বিভাগের ৯০ লাখ ১ হাজার ৫২৬ জন। কিন্তু গত ১ মার্চ পর্যন্ত সিলেট বিভাগের চার জেলা মিলিয়ে করোনা প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৫ জনকে। যা মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। এই জেলায় মোট জনগোষ্ঠীর ৭৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসেছেন। আর সবচেয়ে কম টিকা নিয়েছেন সুনামগঞ্জের মানুষ। হাওরবেষ্টিত এই জেলায় টিকাদানের হার ৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বাকি দুই জেলার মধ্যে সিলেট জেলায় ৭০ শতাংশ ও হবিগঞ্জে ৬৮ দশমিক ৩১ শতাংশ লোক টিকা নিয়েছেন। টিকাগ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকা। ইতোমধ্যে মোট জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশের ওপরে মানুষ টিকা নিয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, গণটিকা পরিচালনা করায় নগরীর প্রায় সব লোকজনই টিকার আওতায় চলে এসেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান, সিলেট বিভাগে মোট যে জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে এর মধ্যে একটি অংশ প্রবাসে থাকেন। যে কারণে টিকা গ্রহীতার হার ৭০ ভাগের কম দেখাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে বিভাগের চার জেলায় বসবাসকারী লোকজনের ৭০ ভাগের ওপর লোকজনকে টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। ভাসমান মানুষ, শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া শিশু ও কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা টিকা গ্রহণে পিছিয়ে থাকায় টিকাদানের হার কিছুটা কম। তবে সবার জন্য টিকা নিশ্চিতে কাজ চলছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, টিকা প্রয়োগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে। এক দিনে ১ কোটিরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ১২ কোটি মানুষকে আমরা টিকার আওতায় আনতে পেরেছি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, টিকা দেওয়ার সংখ্যার দিকে আমরা ১০ম স্থানে আছি। ১৯০টি দেশ আমাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে দেশের টার্গেট জনগোষ্ঠীকে টিকা আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ টিকার আওতায় এসেছে। প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা যারা এখনো টিকার আওতায় আসেননি তাদের নিয়ে আমরা কাজ করছি। ভাসমান মানুষদেরও টিকার আওতায় আনা হয়েছে। বিভাগওয়ারী হিসেবে শতাংশের কম বেশি দেখা গেলেও অনেক মানুষ স্থায়ী ঠিকানায় না থেকে কাজের কারণে অন্য জায়গায় থাকে। তারা হয়তো অন্য জেলা থেকে টিকা নিয়েছে। করোনা থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে টিকার আওতায় আনতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

সর্বশেষ খবর