বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

যানজটে অচল অর্থনীতির নাভি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখনই আট লেনের দাবি

হাসান ইমন

যানজটে অচল অর্থনীতির নাভি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট বাড়ছেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট তীব্র হচ্ছে। এ মহাসড়কের কোথাও না কোথাও প্রায়ই ২০-৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রীদের। বিশেষ করে বয়স্ক ও নারী-শিশুদের দুর্ভোগ চরমে। দেশের অর্থনীতির নাভি হিসেবে পরিচিত এ পথে চলতে গিয়ে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। অতিরিক্ত পুড়ছে যানবাহনের জ্বালানি। এ মহাসড়কে পরিবহনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়া, ফিটনেসবিহীন ও নিষিদ্ধ যানবাহনের উল্টোপথে চলাচল, সড়কের পাশে বাজার, ইউটার্ন ও টোল ব্যবস্থাপনা আধুনিক না হওয়া, হাইওয়ে পুলিশের উদাসীনতা যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাসড়কটি এখনই আট লেন করা দরকার। এ ছাড়া বাজার ও উল্টোপথে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এ যানজট থেকে মুক্তি মিলবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সব পণ্যবাহী ট্রাক-লরি যাতায়াত করে। একই সঙ্গে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির পর্যটকরা চলাচল করেন। যানজট লাঘবে ২০১৬ সালে মহাসড়কটি দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হয়। শুরুতে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও কিছুদিন পর সড়কটি ঘিরে অব্যবস্থাপনা, দুর্ভোগ শুরু হয়। সড়কটি যত দ্রুত সম্ভব আট লেনে উন্নীত করা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘সোনারগাঁর মোগরাপাড়া ও কুমিল্লার গৌরীপুর, ক্যান্টনমেন্ট, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডসহ কয়েকটি জংশন এলাকায় অব্যবস্থাপনা শুরু হয়। একই সঙ্গে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ অসংখ্য ছোট পরিবহন চলাচল শুরু করে। মহাসড়কের সঙ্গে উপজেলা বা গ্রামীণ সড়কের সংযোগের ফলে এসব পরিবহনের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।’

এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট কমাতে হলে ধীরগতির যানবাহনগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড করতে হবে। একই সঙ্গে ধীরগতির যানবাহনগুলো মহাসড়কে যাতে চলাচল করতে না পারে সে জন্য হাইওয়ে পুলিশকে কঠোর নজরদারি করতে হবে। এ ছাড়া মহাসড়কের জংশন এলাকাগুলো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। এসব স্থানে আধুনিক ইউলুপ নির্মাণ করতে হবে, যাতে যানজট তৈরি না হয়।’ তিনি বলেন, ‘টোল আদায় পদ্ধতি ডিজিটাল করতে হবে। যেখানে চালকদের ডিজিটাল লাইসেন্স থাকবে। এ লাইসেন্সে টাকাসহ সব তথ্য জমা থাকবে। এ ছাড়া টোলবক্সে ইলেকট্রনিক বুথ থাকবে, যার মাধ্যমে ডিজিটাল লাইসেন্স থেকে অটোমেটিক টাকা কেটে নেওয়া হবে। আর মহাসড়কের পাশের ২৭৫টি বাজার সরাতে হবে। সড়কে চলা অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’ এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও বাজারগুলো সরানো হলে যানজট অনেকটা কমে যাবে বলে মনে করেন ড. হাদিউজ্জামান। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট কমাতে সার্ভিস লেন করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এ লেনে ধীরগতির পরিবহনগুলো যাতায়াত করবে। আর মূল সড়কে দ্রুতগতির যানবাহন চলবে। এ পরিকল্পনার সমীক্ষার কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে সার্ভিস লেন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মহাসড়কে যানজটের জন্য তিন চাকার ধীরগতির যানবাহনগুলো প্রধানত দায়ী। এগুলো তদারকির জন্য হাইওয়ে পুলিশ রয়েছে। যদিও পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে এগুলো মহাসড়কে চলাচল করে।’ সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়কের কাঁচপুর, মদনপুর, কেওঢালা, দড়িকান্দি, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এবং কুমিল্লার গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, চান্দিনা, ক্যান্টনমেন্ট ও পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার বিভিন্ন স্থানে পুরো সড়ক অরক্ষিত। এ মহাসড়কে অবাধে চলছে ইজিবাইক, অটোরিকশাসহ উল্টোপথে বিভিন্ন যানবাহন। ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের সামনে দিয়েই চলছে এসব যানবাহন। কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত এলাকায় কোনো ধরনের ট্রাফিক আইন মানা হচ্ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করলেও প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ মহাসড়ক পারাপার হচ্ছে। হামেশাই উল্টোপথে তিন চাকার নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচলের কারণে বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী তিশা পরিবহনের চালক আবুল খায়ের বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে সরকারের নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল করে। আর উল্টোপথে বাস, ট্রাক ও তিন চাকার যানবাহন যাতায়াত করে। এদের বেশির ভাগ সোনারগাঁ, ইলিয়টগঞ্জ, চান্দিনা অংশে চলে। মহাসড়কে কাঁচপুর থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত যানজটের প্রধান কারণ এসব যানবাহন।’ অন্যদিকে মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতু ঘিরে কিছুটা যানজট তৈরি হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, যানবাহন থেকে নগদ টাকায় টোল আদায় করা হচ্ছে। এতে ৫০০ বা ১ হাজার টাকার ভাঙতি দিতে কিছুটা সময় নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ট্রাকের ওজন নির্ণয়ে পৃথক স্কেল না থাকায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়। নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বেশি হলে বাধে বিপত্তি। শুরু হয় ট্রাকচালক ও টোল আদায়কারীর মধ্যে বাগ্বিতন্ডা। এতে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে, পেছনে গাড়ির লাইন বাড়ছে।

সর্বশেষ খবর