বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

অবৈধ স্থাপনায় বেহাল কুয়াকাটা

মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা

রাহাত খান, বরিশাল

অবৈধ স্থাপনায় বেহাল কুয়াকাটা

টং ও খুপরি ঘরে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে দেশের দক্ষিণ উপকূলের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে বিরক্ত হচ্ছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। মাঝে মধ্যে নামমাত্র উচ্ছেদের পরও নির্দ্বিধায় সৈকতে এবং বাঁধের পাশে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মচ্ছব চলছে। এতে সৈকতের চরম সৌন্দর্যহানি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে শিগগিরই সৈকত ও বাঁধের পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায় বলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা সৈকতের রয়েছে আলাদা কদর। সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে কুয়াকাটা সৈকতে। কুয়াকাটার কুয়া, মিশ্রিপাড়ার শত বছরের পুরনো সীমা বৌদ্ধ  বিহারে অস্টধাতুর তৈরি ৩৭ মণ ওজনের ধ্যানমগ্ধ গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, বিশাল সমূদ্র, দীর্ঘ সৈকত, সবুজ বেস্টনী, সৈকতে ঢেউয়ের খেলা, লাল কাঁকড়ার, লেম্বুর চর, লতাচাপলী সৈকত, ঝাউবন, ইকোপার্ক, প্রাচীন আমলের বিশাল কাঠের বজ্রা ও কেরানীপাড়ার রাখাইন পল্লীসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে মন জুড়িয়ে যায় পর্যটকদের। এরমধ্যে সৈকতে বস্তির মতো সারি সারি খুপড়ি দোকান এবং বাঁধের টং ঘরে বিরক্ত হচ্ছেন তারা। সরজমিন সৈকতে নেমে ডান দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রশাসনের উচ্ছেদ করা ভাঙা কাঠের খুপড়ি ঘর আবার মেরামত এবং সম্প্রসারণ করা হচ্ছে কোনো ধরনের বাঁধা ছাড়াই। এছাড়া যত্রতত্র টং ঘর উঠানো হচ্ছে সৈকতে। এদিকে সৈকত লাগোয়া বাঁধের পাশে ডান দিকেও গড়ে উঠেছে একাধিক খুপড়ি ঘর। প্রতিনিয়ত আরও টং ঘর তোলা হচ্ছে।

পর্যটক ফিরদাউস সোহাগ বলেন, কুয়াকাটা আন্তর্জাতিকমানের সমুদ্র সৈকত। দেশি-বিদেশি পর্যটকে সারা বছর মুখর থাকে সাগর কন্যা কুয়াকাটা। অর্থ খরচ করে প্রকৃতি উপভোগ করতে যান তারা। অথচ, সেখানের অব্যবস্থাপনা এবং ভগ্নদশায় পর্যটকরা শুধু বিরক্তই হচ্ছেন না; মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সৈকত দৃষ্টিনন্দন করতে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

পর্যটন কেন্দ্রের স্বীকৃতি পাওয়া একটি সমুদ্র সৈকতে বস্তির মতো সারি সারি অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আরেক পর্যটক গিয়াস উদ্দিন সুমন। তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন সজাগ দৃষ্টি রাখলে কোনোভাবেই সৈকতের শ্রীহীন চিত্র ফুটে উঠতো না। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করেন তারা।

ট্যুর অপারেটস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সভাপতি এবং কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, কয়েক বছরে একাধিকবার সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে। অথচ উচ্ছেদের পরপরই আবার অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সৈকতে এবং বাঁধের পাশে প্রথমে পলিথিন টাঙিয়ে বসতি স্থাপন শুরু হয়। পরে ছন, বাঁশ এবং টিন ও কাঠের স্থাপনা গড়ে তোলে তারা। যাদের বেশিরভাগকে পুনর্বাসন করেছে সরকার। অথচ মাছ ধরার অজুহাতে সৈকতে ঘাঁটি গাড়ছে তারা। তুষার আরও বলেন, অবৈধ স্থাপনায় সৈকতের চরম সৌন্দর্যহানি হচ্ছে। এই চিত্র দেখলে পর্যটকদের মন খারাপ হয়ে যায়। পর্যটন স্বীকৃত একটি সমুদ্র সৈকতে এসব কুঁড়ে ঘর বড়ই বেমানান বলে মন্তব্য করেন তিনি। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নির্মাণ কাজ যে পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে সে পর্যন্ত সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে কুয়াকাটা সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। অচিরেই সৈকতে এবং বাঁধের পাশের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। সৈকতে একটি স্থাপনা নিয়ে উচ্চাদালতে মামলা থাকায় সেটির বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

সর্বশেষ খবর