বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতু, হানিফ ফ্লাইওভারসহ মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন অগ্রণী ব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে অগ্রণী ব্যাংক। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিলে পদ্মা সেতু নির্মাণে এগিয়ে আসে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত দ্বিতীয় শীর্ষ এই ব্যাংকটি। ফলে এক সময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলকে বদলে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। শুধু তা-ই নয়, দেশের অগ্রগতিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে অগ্রণী ব্যাংক। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও অর্থায়ন করেছে ব্যাংকটি। ফলে ওই রাস্তায় জনদুর্ভোগ কমেছে। ১৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন 
 
কেন্দ্রে এই ব্যাংকের অর্থায়ন রয়েছে, যেখান থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে ২ হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বাস্তবায়নে অবদান রেখে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া নামের গুরুত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করছে অগ্রণী ব্যাংক।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণে অগ্রণী ব্যাংক একমাত্র বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহকারী। এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণে এ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়াই এককভাবে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করেছে। দেশে প্রথম পিপিপির আওতায় নির্মিত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে (যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার) বিনিয়োগ করার সাহসী পদক্ষেপও নেয় ব্যাংকটি। অগ্রণী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমানে সরকারের অন্যতম নির্বাচনী ইশতেহার ছিল শহর থেকে গ্রামে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্লান্টে ১ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে অগ্রণী ব্যাংক। বর্তমানে এসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট। এ ছাড়া সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চালু করা হয়েছে ঋণের নিত্যনতুন প্রোডাক্ট। এই সময়ে ব্যাংকটি কমপক্ষে ২৫টি নতুন ঋণ প্রোডাক্ট চালু করেছে। যুগোপযোগী করেছে নতুন প্রোডাক্ট। পাশাপাশি মনোযোগ দেয় করপোরেট গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার দিকে। করপোরেট গ্যারান্টি এবং সিন্ডিকেট ব্যবস্থার মাধ্যমে বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তাতে অগ্রণী ব্যাংক সহযোগিতা করেছে। আমরা সে সময় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, সেতু তৈরিতে যত বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে, অগ্রণী ব্যাংক একাই তা সরবরাহ করতে পারবে। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে ডলারের চাহিদা মেটাতে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমঝোতা চুক্তি হয়। কিন্তু আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে এক ডলারও নিইনি। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় থেকে এ পর্যন্ত ১.৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করেছি। 
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলামও বলেছেন একই কথা। তিনি বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমেই বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একটি অ্যাকাউন্ট থেকেই সব অর্থ লেনদেন হচ্ছে। 
জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ক্রান্তিকালে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যাংকের সব ব্যাবসায়িক সূচকে ‘বিগ পুশ’ সৃষ্টির লক্ষ্যে হাতে নেওয়া হয় ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা। তা বাস্তবায়নে আশানুরূপ সাফল্যও অর্জিত হয়। এদিকে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের অসাধারণ ভূমিকা। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সরবরাহ করার লক্ষ্যে অগ্রণী ব্যাংক ১৮টি ব্যাংক এবং ২৭টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৪ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে আইসিবিকে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা তহবিল দেওয়া ছাড়াও ব্যাংকটি পুঁজিবাজারে ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। তা ছাড়া ইক্যুইটি পার্টিসিপেশনের আওতায় ব্যাংকটি পদ্মা ব্যাংকে ১৬৫ কোটি টাকা, কর্মসংস্থান ব্যাংকে ১৬ কোটি টাকা, আইসিবিতে ৬৩ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৯ কোটি টাকা এবং বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডে ৩৭৫ কোটি টাকা ইক্যুইটি বিনিয়োগ করেছে। নারী উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করতে এসএমই খাতে ২১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। অন্যদিকে করোনা মহামারির প্রভাবে ২০২০ সালে পরিচালন মুনাফা কিছুটা কমলেও ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। এ সময় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত ছিল।

সর্বশেষ খবর