বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

বাসা ভাড়া ও খাদ্য ব্যয়ের লাগাম টানার পরামর্শ আইএমএফের

মানিক মুনতাসির

জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতে না পারলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো যাবে না। যা সাধারণ মানুষের ভোগান্তিকে আরও অসহনীয় করে তুলবে। সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় হুহু করে বাড়ছে। একই সঙ্গে যোগ হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত বাসা ভাড়া। দেশের শহরাঞ্চলের মানুষের আয়ের বেশির ভাগ অংশই চলে যায় বাসা ভাড়া দিতে। একইভাবে বেড়েছে খাওয়া খরচও। করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্য ব্যয়ও বেড়েছে কয়েক গুণ। এজন্য বাসা ভাড়া ও খাদ্যপণ্যের বাজারে লাগাম টানার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিং জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি। সম্প্রতি আইএমএফের একটি দল বাংলাদেশ সফর করে। ফিরে যাওয়ার সময় দলটি সরকারের বাজেট বাস্তবায়ন, করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি, সামষ্টিক অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাত, বাজারমূল্য পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য ব্যয়, করোনার টিকাসহ সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের কাছে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিয়ে যায়। সে প্রতিবেদন ঘেঁটে এসব তথ্য জানা গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্য তেল, চাল, ডাল, চিনিসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। করোনা মহামারির মধ্যেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে। যার ফলে শহরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে; যা মূল্যস্ফীতির

চাপ উসকে দিচ্ছে বলে মনে করে আইএমএফ। বাস্তবেও তা-ই ঘটেছে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ বা গড় মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ; যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে। এক মাসের ব্যবধানে ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৯ টাকা ৬৫ পয়সায়। যা আগের মাসে ছিল ১৬০ টাকা ১০ পয়সা। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। এতে অব্যাহতভাবে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির হার। বিবিএসের তথ্যমতে সয়াবিন তেল ও ডিম খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে চিনির দামও। জানুয়ারিতে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৮৫ টাকা ১৫ পয়সা; যা ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ৮৬ টাকা ৮ পয়সা। ফেব্রুয়ারিতে প্রতি হালি ডিমের দাম ১ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৯ টাকা। যদিও বাস্তবে বাজারে এসব জিনিসপত্রের দাম আরও বেশি। এদিকে ভর্তুকি কমাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছে কয়েক মাস আগে। এর প্রভাব পড়েছে পরিবহনসহ সব খাতেই। আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। অন্যদিকে রাজধানীতে বেড়েছে বাসা ভাড়াও। এতে করোনা মহামারি-পরবর্তী মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে; যা মানুষের ভোগান্তি বাড়াবে।’ এ অবস্থায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও লাগামহীন হয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর