বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

চৈত্রসংক্রান্তি আজ, চলছে বর্ষবরণের শেষ প্রস্তুতি

রমনার অনুষ্ঠানে বাড়তি নিরাপত্তা : ডিএমপি কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক

চৈত্রসংক্রান্তি আজ, চলছে বর্ষবরণের শেষ প্রস্তুতি

আজ ৩০ চৈত্র ১৪২৮ বঙ্গাব্দের শেষ দিন। পুরনো গ্লানি মুছে নতুন বছরে সফলতার প্রত্যাশায় যবনিকা ঘটবে বাংলা সালের। পুরনো গ্লানি মুছে নতুন বছরে নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় আজ চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৮ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানাবে সারা দেশের মানুষ।

বরাবরের মতো এবারও নানা আয়োজনে চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপন করবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকজন। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে চলছে বর্ষবরণের প্রধান অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। সরেজমিন চারুকলায় গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ-কাঠের সমন্বয়ে বড় আকারের মাছ এবং ঘোড়া, টেপা-পুুতুলের কাঠামো তৈরি করেছেন মিস্ত্রি ও শিক্ষার্থীরা। এরপর এগুলোতে কাগজের আবরণ দিয়ে রং করা হবে। এছাড়াও তিনটি বৃত্তের সঙ্গে পাখির প্রতিকৃতির সমন্বয়ে বানানো হয়েছে ‘ফুলপাখি’। এবারের শোভাযাত্রায় বড় শিল্পকর্ম হিসেবে থাকবে এগুলো। চারুকলার ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সীমান্ত ঘোষ জানান, প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। মাছ, ঘোড়া, টেপা-পুতুল এবং ফুল-পাখির চারটা প্রতিকৃতি বানানোর কাজ চলছে। ফুল-পাখিটি নতুন একটা প্রতিকৃতি। পয়লা বৈশাখ একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যে একসঙ্গে সংস্কৃতি চর্চা করে তারই প্রতীক হিসেবে এই প্রতিকৃতিটি বার্তা বহন করছে।

এদিকে, জয়নুল গ্যালরিতে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানান রং ও ভাবের মুখোশ, পাখির অরিগামি ও মাটির সরা। আরেকদিকে চলছে মুখোশ বানানোর কাজ। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমি, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, চারুকলা অনুষদ, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও ছায়ানটে থাকছে চৈত্র সংক্রান্তি বা বাংলা পুরনো বর্ষকে বিদায় জানানোর নানা আয়োজন।

রমনার অনুষ্ঠানে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা-ডিএমপি কমিশনার : বাংলা নববর্ষ বরণ উপলক্ষে কোনো হামলার আশঙ্কা নেই। তবে জঙ্গি তৎপরতা বেড়েছে বলে বাংলাদেশকে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো জানিয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। এ উপলক্ষে রমনার অনুষ্ঠান ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রোজার কারণে এবারের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বেলা ২টার মধ্যে শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ বরণ উপলক্ষে রমনা বটমূলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ২০০১ সাল মাথায় রেখে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়। কেউ আক্রান্ত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কোনো রাস্তা দিয়ে কীভাবে নেওয়া হবে সেটার জন্য আলাদা দল প্রস্তুত থাকবে। পাশাপাশি সম্প্রতি কিছু বন্ধু রাষ্ট্র জঙ্গিদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে। উপমহাদেশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারণা করছে ওই রাষ্ট্রগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছু রেডিক্যালাইজড সংগঠনের তৎপরতা লক্ষ্য করছি। সে কারণেই বাড়তি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। যেহেতু নি-িদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছি, কোনো ঘটনাই উড়িয়ে দিচ্ছি না। প্ল্যান করে একটি ছুরি বা ব্লেড নিয়ে কেউ হামলা করতে পারে। সুতরাং সব বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে পুলিশ। বর্ষবরণে অন্যান্য বছর থেকে এবার একটু ভিন্নতা থাকবে। মেলায় পান্তা-ইলিশ ও খাবারের দোকান থাকবে না। অনুষ্ঠানটি সীমিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

যাতে মানুষ এখান থেকে বের হয়ে খুব সহজে বাড়ি ফিরে ইফতার করতে পারে। ‘পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকবে। যেখানে প্রত্যেকটি মানুষকে চেকের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এসব এলাকায় সব যানবাহন বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি বোম ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াত, ডগ স্কোয়াডের পাশাপাশি রমনার লেকে নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল মোতায়েন থাকবে। পহেলা বৈশাখের আগেই পুরো এলাকা সার্চ করা হবে। পুরো চত্বর সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। বিভিন্ন স্থানে ওয়াচ টাওয়ার থাকবে। পহেলা বৈশাখের বিশেষ আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রায় অংশ নিতে হলে আগে চেকিং হয়ে প্রবেশ করতে হবে। মাঝ রাস্তায় চাইলেই কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কেউ প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সদস্যরা কঠোর আচরণ করতে পারে। বেলা ১১টার মধ্যে ছায়ানটের আয়োজন শেষ করতে হবে। আর বেলা ২টার মধ্যে রমনা এলাকায় মেলা গুটিয়ে ফেলতে হবে। ১ টার পরে প্রবেশের সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এসব এলাকায় শিশুদের না আনার অনুরোধ করছি। কারণ এসব স্থানে খাবারের কোনো দোকান থাকবে না। মুখোশ পরে আসা যাবে না। উচ্চ শব্দ তৈরি করে এমন বাদ্যযন্ত্র আনা যাবে না।’ ডিএমপি প্রধান বলেন, ইভ টিজিং প্রতিরোধে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা মাঠে থাকবে। যেখানে অনেক মানুষ একত্রিত হয় সেখানে নারীরা ইভ টিজিংয়ের শিকার হন। আমাদের মায়েরা, বোনেরা, সন্তানরা ইভ টিজিং ও খারাপ আচরণের শিকার হন। সেটি চিহ্নিত করতে আমাদের সাদা পোশাকে উল্লেখযোগ্য সদস্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর