বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে শত কোটির বেশি আত্মসাৎ

কথিত শিল্পপতি জিয়াউদ্দিন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতারণার মাধ্যমে সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শত কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়াউদ্দীন ওরফে জামানকে আটক করেছে র‌্যাব। সোমবার রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে আটক করা হয়।

তার সম্পর্কে র‌্যাব বলছে, ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়াতে প্রবাসে থাকতেই টাইলস ব্যবসায় তার হাতেখড়ি। ২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক ও হাইটেক সিরামিক লিমিটেড নামে আমদানিতে অধিক মূল্য দেখিয়ে ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রায় ৫০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। ৪টি ব্র্যান্ডের সিরামিকস বা টয়লেট সামগ্রীর ব্যবসার আড়ালে প্রতারিত করেছেন শত শত মানুষকে। এখানেই শেষ নয়, প্রতারণার অর্থ থেকে প্রায় ১৩০ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তা দেখিয়ে আবার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৩০০ কোটি টাকা ঋণ। দেশে বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৯টি অ্যাকাউন্ট ও বিদেশে ৩টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্টও রয়েছে তার। টাইলস আমদানির নামে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, জিয়াউদ্দীনের নামে বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে রয়েছে ১৮টির বেশি মামলা। জিয়া নিজেকে ১২টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা এমডি হিসেবে দাবি করেন। এ ধরনের তথ্য সংবলিত ভিজিটিং কার্ডও তৈরি করেছেন। এ ছাড়াও তার অস্ট্রেলিয়া, চায়না, হংকং, ওমান ও দুবাইয়ে নানাবিধ ব্যবসা রয়েছে বলে ভুয়া প্রচারণা চালান। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে কৌশলে প্রলুব্ধ করে ব্যবসায়িক পার্টনার বানানোর নামে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাকে আটক অভিযানে জব্দ করা হয় বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৭টি চেক বই, ৬ বোতল বিদেশি মদ, ৯৯ হাজার টাকার জাল নোট, ৬ হাজার জাল ইউএস ডলার, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ফোসান সিরামিক প্লান্ট এবং জিয়া টাওয়ারের কাঠামোগত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ওমানে অর্থ পাচারের তথ্যাদি, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ‘জাপানে তৈরি’ স্টিকার, ৫ ধরনের আইডি এবং বিজনেস কার্ড, নগদ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ২০০ কোটি টাকা নেওয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সংক্রান্ত নথিপত্র। খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক জিয়া ব্যবসায়িক প্রতারণা ও বিভিন্ন বিষয়াদি এবং কৌশল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন। বিদেশি দুটি দেশের মাফিয়াদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করেন। এতে অর্থ পাচার চক্রের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়। ২০১৪ সাল থেকে ফোসান সিরামিক, হাইটেক সিরামিক লি. এর নামে আমদানির ক্ষেত্রে ২৪ থেকে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করে টাইলস আমদানি দেখাতেন। পরবর্তী সময়ে ওই সব দেশে ৬ শতাংশ কোম্পানি ও ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ নিজে গ্রহণ করতেন। আর এভাবেই ২০১৬ সাল থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাচার করেছেন। আর প্রতারণার কৌশল হিসেবে জিয়া ব্যবসায়ীদের দামি এবং আকর্ষণীয় উপহার পাঠাতেন। পরবর্তী সময়ে তাদের বিদেশে তার কথিত ভুয়া মালিকানাধীন টাইলস ফ্যাক্টরিতে ভ্রমণের ব্যবস্থা করতেন। ফ্যাক্টরির অফিসের পরিদর্শনযোগ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থ দিতেন। তিনি শিগগিরই বাংলাদেশে এ ধরনের ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে যাচ্ছেন বলে ব্যবসায়ীদের প্রলুব্ধ করতেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে বলে প্রচার করতেন।

বিভিন্ন প্রজেক্টের নামে কয়েক শ একর জমি লিজ নিয়ে নিজস্ব বলে প্রচার করতেন। টাইলসহ বেশ কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ধারণা দিতে সাময়িক দোকান ভাড়া করে প্রদর্শন করতেন।

পরবর্তী সময়ে তিনি দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের সেখানে পরিদর্শন করিয়ে বিনিয়োগের নামে অর্থ আত্মসাৎ করতেন। ২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক লি. স্যানিটারি প্যাড, হাইলেডি স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ নানাবিধ পণ্যের আকর্ষণীয় টিভিসির মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে প্রতারিত করতেন। ব্যবসায়িক অংশীদার বানানোর লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ভুক্তভোগীর কাছ  থেকে কয়েক শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ব্যবসায়িক অংশীদারের প্রস্তাব দিয়ে শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। খন্দকার আল মঈন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৯টি অ্যাকাউন্ট ও বিদেশে ৩টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এ ছাড়াও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৬০-৭০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব তিনিই ম্যানেজ করতেন। আমরা তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের ফুটপ্রিন্ট পেয়েছি। আমরা যে মামলা করব সেটিতে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয় থাকবে। মানি লন্ডারিংয়ের মামলা সিআইডি করে। তারা নিশ্চয়ই তদন্ত করবেন। তখন কে বা কারা ব্যাংক লোন পাইয়ে দিতে ও অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছেন কি না তা উঠে আসবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর