মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বিষণ্নতা থেকেই সামাজিক অপরাধ

অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী

বিষণ্নতা থেকেই সামাজিক অপরাধ

যে ব্যক্তি পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করে বা করতে চায়, তার মধ্যে বিষণ্নতা থাকে। একই সঙ্গে তার মধ্যে উদ্বিগ্নতাও থাকে। সে নিজে ঋণগ্রস্ত হওয়ায় এবং পরিবারকে ধ্বংস করার কারণে উদ্বিগ্ন থাকে। তখন সে চিন্তা করে ঋণগ্রস্ত হয়ে সে যদি আত্মহত্যা করে, তখন তার পরিবারকেও সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এজন্য সে নিজে আত্মহত্যা করে এবং পরিবারের অন্যদেরও হত্যা করতে চায়। এ ধরনের চিন্তার ওপর ভিত্তি করেই সাধারণত একটু বেশি বয়সী বা মধ্যবয়সী লোকেরা, যাদের অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা থাকে তারা এ ধরনের বিপজ্জনক কাজ করেন। আমরা এ ধরনের কাজকে ‘সিরিয়াল সুইসাইড’ বলি। এতে বিষণ্ন ব্যক্তি নিজে আত্মহত্যা করে এবং অন্যদের হোমিসাইড করে। এটা প্রায়ই দেখা যায়। এতে দেখা যায় ওই ব্যক্তি আরেকজনকে হত্যা করার পাশাপাশি নিজেও আত্মহত্যা করতে গিয়ে অনেক সময় ধরা পড়ে যায়। আর অতিরিক্ত বিষণ্নতার কারণে সেই লোকটির পরিবার ঘটনার ভিকটিম হয়ে যায়। ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন অব মেন্টাল হেলথের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মো. গোলাম রাব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব বলেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের বিষণ্নতা অনেক দিন ধরে চলতে থাকে এবং ধীরে ধীরে এটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তবে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ধরনের বিষণ্ন রোগীদের অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। বিষণ্নতায় আক্রান্ত কিছু রোগী মানসিক চিকিৎসা সঠিকভাবে করান না। তারা অনিয়মিত চিকিৎসা করানোয় বিষণ্নতা পুরোপুরি দূর হয় না। আর বিষণ্নতা বেড়ে গেলে তিনি আবারও সমস্যায় পড়েন। তিনি চিকিৎসা করবেন কি না তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছের লোকজনও অনেক সময় বিষয়টি বুঝতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখে বোঝা না গেলেও তার মনের মধ্যে আত্মহত্যা ঘটানোর চিন্তা কাজ করে।

এজন্য আমরা চিকিৎসকরা বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগীকে দেখলেই জিজ্ঞেস করি তার মরে যেতে ইচ্ছা করছে কি না। তবে বিষণ্নতা বেশি হলে সেই ব্যক্তি ভালোমন্দ বিবেচনা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।’

এই মনোরোগ চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের এথিকস অনুযায়ী কোনো রোগীর মধ্যে বিষণ্নতা দেখা দিলে তার আত্মীয়দের জানাতে হবে। চিকিৎসা দেওয়া হলে বিষণ্নতা অবশ্যই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু অনেকেই বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলে লজ্জায় মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে যান। এতে ভুল চিকিৎসা হয়। আবার অনেক রোগী আমাদের কাছে এসে বলেন যে তিনি ভালো হয়ে গিয়েছেন, তার চিকিৎসা আর না করার অনুরোধ করেন। অথচ নিয়ম হচ্ছে বিষণ্নতা বেশি হলে দেরি না করে কমপক্ষে নয় মাস ওষুধ খাওয়াতে হবে। কারণ বিষণ্নতা এক ফোঁটা থেকে গেলেও রোগী আবার এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

সর্বশেষ খবর