ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ গতিপথ বদলে ভারতের অন্ধ্র উপকূলের দিকে অগ্রসর হয়েছে। আবহাওয়া অফিস সূত্র জানান, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি খানিকটা উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে অন্ধ্র উপকূলের দিকে যাচ্ছিল। আজ তা আরও খানিকটা দিক পরিবর্তন করতে পারে।
এদিকে অশনির প্রভাবে বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোয় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা বন্দর ও কক্সবাজার সমুদ্রোপকূলে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নৌযানগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে বঙ্গোপসাগরেই লীন হতে পারে। এর প্রভাবে দেশের উপকূলে আসা মেঘের কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম উপকূলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এরই মধ্যে যেসব জায়গায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-বরিশাল : অশনির প্রভাবে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে গতকাল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুরের পর থেকেই মেঘের আড়ালে চলে যায় সূর্য। অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোয় ১ নম্বর ও সমুদ্রবন্দরগুলোয় ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২২৯টি সাইক্লোন শেল্টার। সেখানে গবাদি পশু রাখারও ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানান, গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ৭.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের কোথাও কোথাও ভারী ও অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনা : অশনির প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে গতকাল সকাল থেকে ভারী ও মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে মোংলা সমুদ্রবন্দর ও সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। তবে দমকা বা ঝড়ো বাতাস নেই। নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়নি তবে বাতাসের কারণে কিছুটা উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে মাঝারি থেকে ভারী বা অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল সকাল ৯টা থেকে গুঁড়িগুঁড়ি ও দুপুর ২টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড়টি দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
পটুয়াখালী : কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। গতকাল সকালে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ উপকূল জুড়ে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পটুয়াখালী জেলায় মোট ২৪৪.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস ও কলাপাড়া রাডার স্টেশন।
বাগেরহাট : অশনির প্রভাবে অশান্ত বঙ্গোপসাগর। আছড়ে পড়ছিল বিশাল বিশাল ঢেউ। ঝড়ের পূর্বাভাস ও অশান্ত সাগরে টিকতে না পেরে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সুন্দরবন, শরণখোলা, বাগেরহাটের প্রধান মৎস্যবন্দর কে বি ফিশারি ঘাট ও মোংলায় মাছ ধরা ট্রলারগুলো ফিরে আসে। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, অশান্ত সাগরে টিকতে না পেরে সকালে সুন্দরবনের দুবলা, হিরণ পয়েন্ট, কটকা, কচিখালীর ছোট ছোট খালে অনেক ফিশিং ট্রলার আশ্রয় নিতে শুরু করে।
ভোলা : ভোলায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। সাগর ও নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা সকালেই ঘাটে ফিরতে শুরু করেন।
নোয়াখালী : দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নলচিরা-চেয়ারম্যানঘাটসহ সব রুটে নৌযান চলাচল গতকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। হাতিয়ার মেঘনা নদী উত্তাল ছিল। সকালে জেলার প্রতিটি স্থানে হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত শুরু হয়।
সাতক্ষীরা : সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাতক্ষীরায় হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়া অব্যাহত থাকে। সেই সঙ্গে উপকূলীয় আশাশুনি ও শ্যামনগরের নদ-নদীগুলো উত্তাল ছিল।
পিরোজপুর : পিরোজপুরে অশনির প্রভাব শুরু হয় সকালে। এরপর একটানা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে থাকে। দুপুরে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে।