বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

৮০০ বছর আগের বখতিয়ার মসজিদ ও নাপাইচণ্ডীর মেলা

নজরুল মৃধা, রংপুর

৮০০ বছর আগের বখতিয়ার মসজিদ ও নাপাইচণ্ডীর মেলা

রংপুরের মাহিগঞ্জে তিন গম্বুজ মসজিদ আগাছায় ঢাকা পড়ে আছে। যদিও এখনো চলছে নাপাইচণ্ডীর মেলা। দ্রুত এসব ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অধীনে নেওয়া না হলে হারিয়ে যাবে ৮০০ বছর আগের বখতিয়ার খলজির আমলে নির্মিত এ স্মৃতিচিহ্ন। মেহরাবে চিড় ধরেছে অনেক আগেই। খসে পড়েছে দেয়ালের ইট, পলেস্তারা। এ মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে বখতিয়ারি মসজিদ নামে পরিচিত।

পীরগাছার মন্থনার জমিদার জয়দুর্গা দেবী (দেবী চৌধুরানী) ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যে স্থানে নিহত হয়েছিলেন সে স্থানসহ ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিহত ইটাকুমারীর জমিদার শিবচন্দ্র রায় ও দেবী চৌধুরানীর ছোট ভাই কেষ্ট কিশোর চৌধুরীসহ অসংখ্য ফকির-সন্ন্যাসীর স্মৃতিবিজড়িত স্থান এখন উপেক্ষিত। প্রতি বছর বৈশাখের বৃহস্পতিবার ওই স্থানে মেলা হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এখন পর্যন্ত এসব স্থান সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এ ছাড়া মাহিগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি, ফায়ার সার্ভিসের অভ্যন্তরে জমিদারবাড়িসহ অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উপেক্ষিত। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বলছে, শিগগিরই জরিপ শুরু হবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও তাজহাট জমিদারবাড়িসহ মাত্র ৫৮টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দেখছে। বখতিয়ার মসজিদ প্রসঙ্গে রংপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান কাজী জুননুন বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ওখানে একটি স্মৃতিফলক লাগিয়েছিলাম। দ্বাদশ শতকে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজি চীন অভিযানে যাওয়ার সময় রংপুরে আস্তানা গেড়েছিলেন। তখন ওই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। আমার আমলে মসজিদটি সংস্কারে ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোকের কারণে সম্ভব হয়নি।’

মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৩২ ফুট লম্বা, প্রস্থে ১৩ ফুট। মাটি থেকে কার্নিশের উচ্চতা ১০ ফুট। পুব দিকের দেয়ালে রয়েছে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার খিলানবিশিষ্ট প্রবেশপথ। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালের প্রবেশপথগুলোও প্রায় একই রকম। উত্তরের প্রবেশপথটি ছাড়া অন্য পথগুলো ইটের গাঁথুনি দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। পীরগাছার মন্থনার জমিদার জয়দুর্গা দেবী (দেবী চৌধুরানী) ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যে স্থানে নিহত হয়েছিলেন সে স্থানটি এখনো উপেক্ষিত। ইংরেজদের সঙ্গে লড়াইয়ের মাঠের মাঝখানে তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর উত্তরে লাগোয়া আর একটি দালানের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।

দালান দুটির সামনে রয়েছে একটি বিরাট পুকুর। পুকুরটি দেবী চৌধুরানীর নির্দেশে খনন করা হয় বলে কথিত আছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি দরজা।

স্থানীয় লোকজন চণ্ডীদেবীর (দেবী চৌধুরানীর) গৌরবগাথা স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখার জন্য লড়াইয়ের এ স্থানটিতে ‘নাপাইচণ্ডীর মেলা’ নামে মেলার প্রচলন করেন। চণ্ডীপুর গ্রামটি ছিল ইংরেজবিরোধী বিদ্রোহী পীর-ফকির-সন্ন্যাসীদের শক্তিশালী গোপন ঘাঁটি। আলাইকুড়ি নদী থেকে দুটি সংযোগ খাল কেটে গোপন দুর্গ ভবনে সংযোগ দেওয়া হয়। এ সংযোগ খালে দেবী চৌধুরানীর নৌকার বহর রাখা হতো। চণ্ডীপুরের গোপন দুর্গ ভবনে নবাব নুরউদ্দিন বাকের জং, ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানী ও শিবচন্দ্র রায় মাঝেমধ্যে গোপন সভায় মিলিত হয়ে ইংরেজবিরোধী সংগ্রামের রণকৌশল নির্ধারণ করতেন। ইংরেজের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত দেবী চৌধুরানীসহ অন্যদের পাশের এলাকায় সমাহিত করা হয়েছিল বলে ওই স্থানটির নামকরণ হয় ‘পবিত্র ঝাড়’। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রংপুর-রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘যেসব প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি এর জন্য একটি জরিপ কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে।’

সর্বশেষ খবর