বাংলাদেশের একেক এলাকার বৈশিষ্ট্য যে একেক রকম, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সে অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশটাকে চিনতে হবে, জানতে হবে। বাংলাদেশের কিন্তু একেক এলাকা একেক রকম। এটাও মাথায় রাখতে হবে। তা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।
গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের প্রথম সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, আমাদের ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে আজকের যে বিশাল সমুদ্র রাশি আমরা পেয়েছি এ সম্পদটা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা ব্লু ইকোনমি ঘোষণা দিয়েছি। অর্থাৎ সুনীল অর্থনীতি, সমুদ্র সম্পদকে আমাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো। কিছু কিছু কাজ কিন্তু শুরু হয়েছে খুব সীমিত আকারে। সরকারপ্রধান বলেন, সমুদ্র সম্পদ নিয়ে আমাদের একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত। সেখানে আমরা কতটুকু কী কী করতে পারি। সেখানে আমরা তেল-গ্যাস উত্তোলন অর্থাৎ সামুদ্রিক যে সম্পদ যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে, খাদ্য নিরাপত্তায় কাজে লাগতে পারে বিভিন্নভাবে, বিশাল মৎস্য ভান্ডার এখানে। তিনি বলেন, এ সম্পদ আমরা হেলায় হারাতে পারি না। এটা অর্থনৈতিক অঙ্গনে কীভাবে কাজে লাগাব তা আমাদের দেখা দরকার।শেখ হাসিনা বলেন- আরেকটি বিষয় হলো, বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে গুরুত্বটা হলো যে, আদিকাল থেকে এ বঙ্গোপসাগর দিয়ে সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্যটা চলে। দুই পাশে দুটি মহাসাগর। এক মহাসাগর থেকে আরেকটাতে যেতে গেলে এ বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়েই কিন্তু চলাচলটা হয়। সেদিক থেকে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব কিন্তু অনেক বেশি। কাজেই এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ আমরা কীভাবে আমাদের অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারি তাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। বঙ্গোপসাগরকে দূষণমুক্ত রাখার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন দূষণ তো সব দেশেই। সাউথ সিতে এমন অবস্থা যে সেখানে পানি পাওয়া যায় না। শুধু তেলের ফেনা, আমি নিজে সেখানে গিয়ে দেখে এসেছি। হাতে তুলেও নিয়েছিলাম। নেদারল্যান্ডসে থাকতে আমি গিয়েছিলাম। কাজেই আমাদের উপমহাদেশে যেন আমাদের বঙ্গোপসাগরটা সেরকম দূষণ না হয় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। এটা যেমন পলিউশনমুক্ত রাখতে হবে, পাশাপাশি এ সম্পদটা আমরা কীভাবে কাজে লাগাব তাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। যত্রতত্র শিল্প-কারখানা যেন না হয় সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে জানান প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন তিনি। নদী-খালগুলো সচল রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা মাথায় রাখতে হবে আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশ। একটা মানুষের শরীরে যেমন শিরা-উপশিরা, ঠিক নদীগুলোও আমাদের দেশের জন্য শিরা-উপশিরা। তিনি বলেন, ছোট বেলায় বাবার কাছে গল্প শোনতাম আমাদের দেশে আগে নিয়মিত ড্রেজিং হতো। ড্রেজারগুলো থাকত আসামে। সেগুলো নেমে নিচে চলে আসত এবং নদী কেটে সেগুলো আবার সেখানে থাকত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেই ড্রেজারগুলো গানবোট হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। তারপর থেকে আর কোনো নদী ড্রেজিং হয়নি। নদীর নাব্য ধরে রাখার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে সেগুলোর নাব্য বাড়ানো। পাশাপাশি প্রতিবছর সেগুলো রক্ষণ করার জন্য ড্রেজিং ও নদীগুলো যেন মরে না যায় সে ব্যবস্থা নেওয়া। বদ্বীপটাকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা উন্নত জীবন দেওয়া এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার। ডেল্টা প্ল্যান প্রসঙ্গে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ডেল্টা প্ল্যান করার লক্ষ্যটা হলো- আমাদের ভবিষ্যৎ করণীয় সেটা আমরা সুনির্দিষ্ট করে ফেলেছি। কাজেই ২০২০-এর মধ্যে আমাদের রূপকল্প বাস্তবায়ন করে ২১ সালে এসে সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করেছি। পরিকল্পনা আরেকটা নিয়েছি ২১ থেকে ৪১ পর্যন্ত আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা হচ্ছে একটা কাঠামো। এ কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই আমাদের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বদ্বীপটাকে রক্ষা করা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা উন্নত জীবন দেওয়া এটা আমি মনে করি আমাদের জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন। আসলে পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নিতে পারলে যে কোনো কঠিন কাজ সমাধান করা যায়। যে পদক্ষেপই আমি নিই সময়ের বিবর্তনে সেগুলো সংশোধন করা এ মানসিকতাও থাকা উচিত। কাজেই আমরা সেভাবেই পদক্ষেপগুলো নিয়েছি ও বাস্তবায়ন করেছি। যার ফলে আমরা কিন্তু একটা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি।
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। কারণ আমরা জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃতির কোনো ক্ষতি হতে দিই না। কিন্তু উন্নত দেশগুলো ক্ষতি করছে তার প্রভাবে জলবায়ুর ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু এর আঘাতটা বাংলাদেশের ওপর আসবে।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।