রবিবার, ২৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

তিন কৌশলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

ভর্তুকি সমন্বয়, সামাজিক নিরাপত্তা সম্প্রসারণ, আমদানি নিয়ন্ত্রণ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

তিন কৌশলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

প্রথমবারের মতো বাজেটের অগ্রাধিকার পরিবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাজেট প্রণয়নে প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) অর্জনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও এবার তা বদলে যাচ্ছে। আগামী মাসে যে বাজেট উপস্থাপন করা হবে তার মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। কৃষিনির্ভর দেশ হলেও অধিক জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা সামাল দিতে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ বেশির ভাগ খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। এ আমদানিনির্ভরতার কারণেই মূল্যস্ফীতি এখন পাগলা ঘোড়ার মতো আচরণ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবারের বাজেটে তিনটি কৌশল থাকছে। এগুলো হলো- ভর্তুকি সমন্বয়, সামাজিক নিরাপত্তা সম্প্রসারণ ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ। সূত্র জানান, আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হতে পারে ৭ দমমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। আর সরকারি-বেসরকারি খাতে মোট বিনিয়োগ অনুমান করা হয়েছে জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ২৪ দশমিক ৯ ও সরকারি খাতে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বিনিয়োগ আশা করা হচ্ছে। বাজেটের এ প্রাক্কলনগুলো যাতে অর্জনযোগ্য হয়, এখন সেদিকে লক্ষ্য রেখে কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। এপ্রিলে আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে নতুন অর্থবছরের জন্য যে বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তাতে ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাবদ জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়। চলতি বাজেটে যা ছিল জিডিপির ১ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থ বিভাগ জানায়, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে ভর্তুকির যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, বাজেটে তার চেয়ে ভর্তুকি আরও বাড়বে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে উপশম দিতে ভর্তুকি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া দরিদ্র শ্রেণিকে সুরক্ষা দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও সম্প্রসারণ করা হবে। বিশেষ করে সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানো হতে পারে। সূত্র জানান, মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি বাজারে যেহেতু ডলারের দাম বাড়ছে  সে কারণে এরই মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে পণ্য সরবরাহ বা সাপ্লাই চেন যাতে স্বাভাবিক থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে। বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহ করা, আবার খাদ্যপণ্যের সরবরাহ চেন স্বাভাবিক রাখার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি নিরুৎসাহ করতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এলসির মার্জিন বাড়িয়েছে। কিছু পণ্যের করভার বাড়িয়েছে এনবিআর। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে যে উপকরণ রয়েছে সেগুলোও তারা ব্যবহার করতে পারেন। এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে নীতিনির্ধারণী সুদের হার বৃদ্ধি। তবে করোনা মহামারির কারণে বিগত দুই বছর যেহেতু অর্থনীতিতে স্থবিরতা ছিল, সে কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে প্রচলিত উপকরণ রয়েছে সেগুলো ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হচ্ছে। এ সময়ে যতই জরুরি হোক সুদের হার বাড়িয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়ার উদ্যোগ বুমেরাং হতে পারে।

কর্মকর্তারা জানান, টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার ছেড়ে সমমূল্যের টাকা তুলে নিয়েছে। এর ফলে ব্যাংকের তারল্য কিছুটা কমেছে। বাজারে কমেছে টাকার প্রবাহ। এটা আরও কমালে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ফলে সরকারকে এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে যাতে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে আবার মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর এজন্য বাজেটে ভর্তুকি বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা সম্প্রসারণের মতো কৌশলগুলো নেওয়া হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর