মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

নৌকার গতি বাড়ছে, চলছে ঘড়ি ছুটছে ঘোড়া

ইভিএমে সন্তুষ্ট প্রার্থীর প্রতিনিধিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কুমিল্লা প্রতিনিধি

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ২১ প্রতিনিধি। গতকাল তারা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এসেছিলেন। এদিকে কুসিক নির্বাচনে ধীরে ধীরে নৌকার প্রচারণায় গতি বাড়ছে।

গতকাল সন্ধ্যায় কাপ্তান বাজারসহ ছয়টি স্থানে পথসভা হয়। দ্বিতীয় দিন থেকে মাঠে আছেন টেবিলঘড়ির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। গতকাল তিনি দিনভর মহানগরীর নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। ঘোড়া প্রতীকের তরুণ প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার প্রথম দিন থেকে তার প্রতীক নিয়ে ছুটছেন। ইভিএম কাস্টমাইজেশন দেখতে কুসিকের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ২১ প্রতিনিধি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এসেছিলেন। কাস্টমাইজেশন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি ইভিএম কীভাবে কাজ করে তা-ও তাদের দেখানো হয়। কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতিনিধিরা এ প্রক্রিয়া দেখে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, তারা ইভিএমের সোর্স কোড জানতে চেয়েছিলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তা প্রকাশ করা হবে না বলে তাদের জানানো হয়েছে। কেউ কেউ ভোট দেওয়ার পর যে ডাটাবেজ থাকে তা দেখতে চেয়েছিলেন, তবে তা দেখানো হয়নি। এদিকে এ প্রতিনিধি দলে দুজন ছিলেন বিএনপি নেতা মনিরুল হকের সাক্কু মনোনীত। কাস্টমাইজেশন দেখার পর তাঁর প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। কুসিকের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী মাহবুবুর রহমানের প্রতিনিধি কাজী মশিউর রহমান বলেন, ‘আমি ইভিএমের কারিগরি দিকগুলো নিয়ে জানতে চেয়েছিলাম। এসব বিষয়ে উত্তর পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ইভিএমের সফটওয়্যারের সোর্স কোড যেন তাদের দেখানো হয়। এটি দেখলে বোঝা যাবে এর ভিতরে কিছু করার সুযোগ আছে কি না, যেমন ১০টি ভোট এক প্রতীকে পড়বে এর পরের ভোট আরেক প্রতীকে পড়বে- এ ধরনের কিছু করা সম্ভব কি না। তবে ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সোর্স কোড প্রকাশ করা হবে না। তবে সব মেশিনে একই সোর্স কোড ব্যবহার করা হবে। এ বিষয়ে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, ‘সোর্স কোড নিরাপত্তার বিষয়। এটি কখনো কাউকে দেওয়া হবে না। কারণ এর সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। তবে মেশিন ঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকছে। ভোটের ফলাফল থেকে বোঝা যায় এটা ঠিকভাবে কাজ করছে কি না।’ এদিকে কুসিক নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণা চলছে রোদবৃষ্টি মাড়িয়ে। গতকাল ছিল প্রচারণার চতুর্থ দিন। পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আলোচনায় আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত, স্বতন্ত্র টেবিলঘড়ির মনিরুল হক সাক্কু ও ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দিন কায়সার। প্রথম দুই দিন গণসংযোগে ছিলেন না নৌকার প্রার্থী। রবিবার সন্ধ্যায় ছোটরা এলাকায় প্রথম পথসভা করেন। গতকাল সন্ধ্যায় কাপ্তান বাজারসহ ছয়টি স্থানে পথসভা করা হয়। ধীরে ধীরে নৌকার প্রচারণার গতি বাড়ছে। দ্বিতীয় দিন থেকে মাঠে আছেন সাক্কু। গতকালও তিনি দিনভর নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এদিকে নিজাম উদ্দিন কায়সার প্রথম দিন থেকে তার প্রতীক নিয়ে ছুটছেন। সূত্রমতে, ১৩ জুন রাত ৮টায় প্রচারণা শেষ। হাতে আছে ১৪ দিন। ২৭টি ওয়ার্ড। সব ওয়ার্ডেই যেতে হবে। এজেন্ট ঠিক করা, কেন্দ্র পরিদর্শন, কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে প্রতিদিনের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে বৈঠক। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে নির্বাচনী কাজ। মেয়র প্রার্থীদের এখন দম ফেলার সময় নেই। দিনরাত এক করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা এখন গড়ে চার ঘণ্টাও ঘুমাতে পারছেন না। বেশির ভাগ সময় পথে খাচ্ছেন সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার। মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত দীর্ঘদিন রাজনীতি করলেও এটিই প্রথম জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ। তিনি জানান, সকালে ঘুম থেকে উঠে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। পূর্বসূচি অনুযায়ী গণসংযোগে বের হন। তিনি বলেন, ‘আগেও গণসংযোগ করেছি। দলের জন্য মিছিল-মিটিং করেছি। আমার অভিজ্ঞতা আছে। পার্থক্যটা হলো এবার নিজেই প্রার্থী হয়েছি। গণসংযোগে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’ মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ঘোষণার পর টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। গেল দুবারই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছেন সাবেক এই বিএনপি নেতা। এবার তাঁর প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী। সাক্কু বলেন, ‘আমি দুবারের মেয়র। এর আগে পৌরসভার মেয়র ছিলাম। আমি প্রতিটি পাড়ামহল্লা চিনি। লোকজনদেরও চিনি। তারাও আমাকে চেনেন। গণসংযোগের সময় মানুষ আমাকে দেখলে উৎসাহ দেয়।’ নিজাম উদ্দিন কায়সারের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থাকলেও প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তিনি সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মহানগরী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির পদ ছেড়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি। ঘরে নাশতা করা হয় না। পথে কোথাও বসে পড়ি। রাতে ঘুমাতে গেলে ফজরের আজান কানে আসে। ক্লান্তি ভর করে। তবে কিছু করার নেই। এখন আসলে ঘুমানোর সময় নেই।’ এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র কামরুল আহসান বাবুলও সীমিত পরিসরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। উল্লেখ্য, ১৫ জুন কুসিক নির্বাচন। মেয়র প্রার্থী পাঁচজন। এ ছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সর্বশেষ খবর