বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জে ফের বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উত্তরাঞ্চলে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুরে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সিরাজগঞ্জেও যমুনার পানি বাড়ছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার সীমান্তবর্তী অনেক এলাকা ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সেসব এলাকায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আবারও বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে বৃষ্টিপাত ও ঢল আসা বন্ধ হলে দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবো জানায়, গতকাল বিকালে জেলার প্রধান নদী সুরমার পানি ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৭৯ মিলিমিটার।এদিকে ঢলের পানিতে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বালিজুরি, উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ শ্রীপুর, সদর, বড়দল উত্তর ইউনিয়নের অনেক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা। বালিজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের মধ্যে ১৪টি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। প্রধান সড়কটি পানির নিচে। সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাজারেও হাঁটুপানি রয়েছে।
বালিজুরি নয়াহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক জানান, ঢলের পানি তার স্কুলে ঢুকে পড়ায় গতকাল ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয়নি। শ্রেণিকক্ষে হাঁটুপানি রয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রায়হান কবির জানান, পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের দুর্গাপুর, শক্তিয়ারখলা, বালিজুরি ও আনোয়ারপুর অংশ রবিবার থেকে ঢলের পানির নিচে তলিয়ে আছে। এতে জেলা সদরের সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। এদিকে, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ-আদুখালি সড়ক ঢলের পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সেখানকার নদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল হিসেবে পরিচিত নবীনগর, তেঘরিয়া ঘাট, সুলতানপুর ও কালীপুর এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলের কারণে সবকটি নদ-নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে জেলার ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পেয়ে এসব এলাকার বেশকিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে রৌমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কম থাকলেও ওই উপজেলার পাশে অবস্থিত ভারতের আসাম রাজ্যের কালোর নদী ও ধরণী নদী এবং বাংলাদেশের রৌমারীর ব্রহ্মপুত্র সংলগ্ন জিঞ্জিরাম নদী বেয়ে ধেয়ে আসা লাল পানি সাময়িক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
সিরাজগঞ্জ : পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১১ পয়েন্ট ৮২ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১.৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলের ফসল তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও যমুনার অরক্ষিত অঞ্চল শাহজাদপুর, এনায়েত ও চৌহালীতে ভাঙন শুরু হয়েছে।