শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

নাটকীয়তা শেষে জেনেভা প্যাকেজ ঘোষণা

বাণিজ্য সুবিধা পেতে বাংলাদেশের আলোচনার পথ খোলা

মানিক মুনতাসির, (জেনেভা, সুইজারল্যান্ড থেকে)

বহু নাটকীয়তার পর সুইজারল্যান্ড সময় গতকাল ভোরে জেনেভা প্যাকেজ ঘোষণা করে ডব্লিউটিও ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের সমাপ্তি টানা হয়েছে। সারা রাত ধরে ধারাবাহিক আলোচনা করেও বড় কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। তবে বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করবে তাদের পরবর্তী বাণিজ্য সুবিধা বহাল রাখতে আলোচনার পথ খোলা রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশও ২০২৬ এর পর অন্তত আরও ছয় বছর এলডিসি সুবিধা পেতে আলোচনা করতে পারবে। এতে নেগোসিয়েশনের কাজ করবে ডব্লিউটিও।  এর আগে গত ১৬ জুন বাড়তি সময়েও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় ১৭ জুন সকাল পর্যন্ত নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এমনকি ১৫ ও ১৬ জুনের সভার নিয়মিত আপডেটও দেয়নি সম্মেলনের আয়োজকরা। সংবাদ সম্মেলন ডেকেও বারবার তা বাতিল করা হয়। সম্মেলনের ভিতরে এলডিসিভুক্ত দেশগুলো তাদের ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে। অনেক দেশের অংশগ্রহণকারীরা সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই জেনেভা ছেড়ে যায়।

১৭ জুন সকালে ডব্লিউটিও থেকে জানানো হয়, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৬৪ সদস্য দেশ প্রায় ছয় দিন এবং রাতের ধারাবাহিক আলোচনার পর বাণিজ্য বৃদ্ধির সুবিধার্থে প্রধান বৈশ্বিক সমস্যাগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তবে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

ঘোষিত জেনেভা প্যাকেজে বলা হয়, ডব্লিউটিওর ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন কভিড-১৯ মহামারীতে ক্ষতির বিবেচনায় নিয়ে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে আর্থিক ও বাণিজ্য সুবিধা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো মহামারির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এরকম বৈশ্মিক মহামারি মোকাবিলায় সারা বিশ্ব একসঙ্গে কাজ করবে বলে অঙ্গীকার করা হয়। ডব্লিউটিওর সদস্য দেশগুলো এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে। ডব্লিউটিও তার মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণায় আরও বলেছে, তারা খাদ্য নিরাপত্তা, জরুরি সময়ে খাদ্য ক্রয় থেকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অব্যাহতি পাবে। ই-কমার্সের ওপর আপাতত কোনো কর বা মূসক আরোপ করা যাবে না। মৎস্য খাতে ভর্তুকি ইত্যাদি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে। ডব্লিউটিও তার মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণায় আরও বলেছে, তারা খাদ্য নিরাপত্তা, জরুরি সময়ে খাদ্য ক্রয় থেকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অব্যাহতি, ই-কমার্সের ওপর কর মওকুফ এবং মৎস্য ভর্তুকি ইত্যাদি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে। ঘোষণায় ডব্লিউটিও সদস্যরা স্বল্পোন্নত দেশ এবং স্নাতক এলডিসিতে বাণিজ্য সুবিধা প্রসারিত করতে সম্মত হয়েছে, যদিও এটি এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি কতদিন এবং কীভাবে সুবিধাটি উপকৃত দেশগুলোতে বিতরণ করা হবে। এ ধারাটি গৃহীত হওয়ার কারণে ২০২৬ সালে একটি উন্নয়নশীল দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পরেও বাংলাদেশের এলডিসি বাণিজ্য সুবিধা উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে যদিও আরও আলোচনার প্রয়োজন।

কারণ ঘোষণাটিতে এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি তবে সুবিধার অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঘোষণা উদাহরণস্বরূপ, ডব্লিউটিও তার ঘোষণাপত্রে বলেছে, ‘এই কঠিন প্রেক্ষাপটে, আমরা সন্তুষ্টির সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, এলডিসি সদস্যরা জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতির (সিডিপি) দ্বারা নির্ধারিত গ্র্যাজুয়েশন মানদণ্ড পূরণ করেছে বা যারা পূরণ করতে চলেছে। গ্র্যাজুয়েশন যে বিশেষ চ্যালেঞ্জগুলো উপস্থাপন করে, সেগুলোকে স্বীকার করুন, যার মধ্যে বাণিজ্য-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থার ক্ষতি, কারণ তারা এলডিসি বিভাগ থেকে বেরিয়ে যায়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর