বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এখন শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। একদিকে বন্যা অপরদিকে নদী ভাঙনে দিশাহারা কুড়িগ্রামের মানুষ। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রসহ তিস্তা নদীর ১৫টি পয়েন্টে নদী ভাঙন চলছে। এ ছাড়া বন্যা আক্রান্ত এলাকায় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটও চলছে। সিলেটের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে ৮৫ ভাগ মানুষ বাড়ি ফিরেছেন। সেখানকার মানুষ এখন শুরু করেছেন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। কুড়িগ্রামে গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় তিস্তা ও ধরলায় শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিস্তা নদীর ভাঙনে সদরের হলোখানার সারডোব এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগার কয়েকটি স্থানে এবং হাতিয়া ইউনিয়নের একটি বাজারে প্রায় ২০টি দোকানঘর ও অর্ধশতাধিক বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। এদিকে গত কয়েক দিনে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ৯ উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের ৩ শতাধিক গ্রামের বানভাসি মানুষের ভোগান্তি কমেনি। অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। নিম্নাঞ্চলের নদী অববাহিকার ঘরবাড়ি থেকে এখনো পানি সরে যায়নি। যেসব এলাকা থেকে পানি সরে গেছে সেখানকার মানুষও বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। বাড়িঘরে কাদা ও কেঁচো বাসা বেঁধেছে। চলতি বন্যায় ৩ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ওঠে। বেশকিছু প্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমে গেলেও ক্লাস চালু করা যায়নি। সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের চরের পাশের বাসিন্দা ইউসুফ হোসেন জানান, চর থেকে পানি নেমে গেলেও বাড়িতে এক হাঁটু কাদা। তাই বাড়িতে যেতে পারছি না। আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া বাড়িঘর মেরামত করার টাকাও নেই।
সিলেটে শুরু হয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই : সিলেটে সুরমা, ধলাই, পিয়াইন, সারি ও লোভা নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলো থেকে পানি প্রায় নেমে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকেও ৮৫ ভাগ মানুষ বাড়ি ফিরেছেন। কুশিয়ারা তীরবর্তী বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। এ লড়াইয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন বন্যাকবলিত মানুষ। সিলেট সিটি করপোরেশন এবং জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভায় ৬১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। আশ্রয় নিয়েছিলেন ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৮ জন বন্যার্ত। গতকাল পর্যন্ত ৪৬৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার ৪৬৪ জন। বন্যার্তরা চলে যাওয়ায় ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৪৬টি আশ্রয় কেন্দ্র। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ফেরার পর বাড়ি গিয়ে আরও বড় সমস্যায় পড়েছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা। অনেকের ঘর পানিতে ভেসে গেছে, ধসে পড়েছে কোনো কোনোটি। যাদের কাঁচাঘর এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোর অবস্থাও নড়বড়ে। যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যার পানিতে বেশির ভাগ মানুষের আসবাবপত্র ও ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। ফলে নতুন করে তাদের শুরু করতে হচ্ছে জীবনসংগ্রাম।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত সিলেটের জন্য ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল, ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার, ২ কোটি ৬৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং শিশু ও গো-খাদ্যের জন্য ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা। গতকাল পর্যন্ত বিতরণ শেষে মজুদ রয়েছে ২৫ মেট্রিক টন চাল, ৪০ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার।