সোমবার, ৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

দুর্ভোগ কমেনি কুড়িগ্রামে পানি বাড়ছে যমুনায়

ঝুঁকিতে ৬০ হাজার গর্ভবতী

প্রতিদিন ডেস্ক

দুর্ভোগ কমেনি কুড়িগ্রামে পানি বাড়ছে যমুনায়

সিরাজগঞ্জে নদী ভাঙন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কিছু নদ-নদীতে বন্যার পানি কমতে থাকলেও সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি এখনো বাড়ছে। ফলে অব্যাহত রয়েছে ভাঙন ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়া। নেত্রকোনার নিচু এলাকাগুলো এখনো ডুবে আছে। কুড়িগ্রামে পানি কমলেও দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। আমাদের  প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি বেড়েই চলেছে। ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বিকালে পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া কাজিপুর পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। বসতভিটাগুলোর চারপাশে পানি থই থই করছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি চরাঞ্চলের সব ফসলি জমি তলিয়ে থাকায় কৃষক-শ্রমিকরা বেকার রয়েছেন। বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে খাদ্য ও শিশুখাদ্যের সংকট চরমে উঠেছে। এ ছাড়া পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত এলাকা শাহজাদপুর, চৌহালী ও এনায়েতপুরে ভাঙন অব্যাহত আছে। ভাঙনে ফসলি জমি ও বসতভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত শুক্রবার শাহজাদপুরে নদীভাঙনে ২০টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযান করছে। শাহজাদপুরের মাজ্জাম গ্রামের আবু জাফর, আবুল কালাম আজাদ, বারিকুল শেখ, ফুলমালা, কমলা খাতুন, সাবানি খাতুন, হালিমা খাতুন, জয়ফল খাতুন, রমিছা খাতুন ও সারমিন খাতুন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ফকিরপাড়া গ্রামের তিনটি পাকা বাড়িঘর যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। এখনো মাজ্জাম, ফকিরপাড়া ও বিনোটিয়া গ্রামের চারটি পয়েন্টে প্রায় শতাধিক স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে।  কাওয়াকোলা ইউনিয়নের মেম্বার আবদুর রাজ্জাক জানান, কাওয়াকোলা ইউনিয়নের পুরো এলাকার ফসলি জমি পানির নিচে রয়েছে। বসতভিটায় পানি না উঠলেও চারপাশে পানি থই থই করছে। ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। মানুষজন ঘরবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। নেত্রকোনা : বন্যায় প্লাবিত হওয়া নেত্রকোনা জেলার ১০ উপজেলার ৭৭টি ইউনিয়নের কিছু উঁচু এলাকা থেকে পানি নামলেও ডুবে আছে নিচু এলাকা। এ অবস্থায় ভোগান্তি কমছে না মানুষের। ২৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র থেকে অনেকেই বাড়ি ফিরলেও চলাচল করতে পারছেন না এখনো।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকালে কলমাকান্দা উপজেলার উব্দাখালী নদীর পানি কমলেও বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচে, কংশ জারিয়া পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে সব নদ-নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হলেও পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক। চলতি বন্যায় জেলায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর ফসল বিনষ্ট হয়েছে এবং ৯ উপজেলার ৮০ হাজার ৩৫ জন কৃষক ও চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার পানি নেমে গেলেও এসব ফসলি জমি এখনো পানির নিচে রয়েছে। বাড়িঘরে পানি থাকায় এখনো কেউই আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরে যাননি। তবে খুব শিগগিরই বাড়িতে ফিরলেও ক্ষতিগ্রস্ত ঘর সংস্কারে অর্থের প্রয়োজন বলে জানান তারা। সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ঝুঁকিতে ৬০ হাজার গর্ভবতী নারী : চলতি বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের নারী ও শিশুরা মারাত্মক দুর্ভোগ ও ঝুঁকিতে রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার গর্ভবতী নারী। যাদের মধ্যে অন্তত ৬ হাজার নারীর সন্তান প্রসব হবে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে।

গত শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল। এতে আরও বলা হয়েছে, বন্যা উপদ্রুত এলাকায় পানিবন্দি অবস্থায় ১৭৭ জন নারী সন্তান প্রসব করেছেন। দুর্গত মানুষদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক কো-অর্ডিনেটর জিন লুইসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বন্যা উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হয়, ১২২ বছরের ইতিহাসে এ অঞ্চলের মানুষ এমন বন্যা দেখেনি। সিলেট বিভাগের চার জেলাসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৯টি জেলার প্রায় ৭২ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯টি জেলার মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার অবস্থা সবচাইতে বেশি ভয়াবহ। প্রায় ৫ লাখ লোক আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করছেন, যারা অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে নারী ও মেয়েরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। মে মাসের আকস্মিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি যখন এ বিভাগের মানুষ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন, তখন আবারও বন্যা আঘাত হানল। আগামীতে আরও বন্যা হতে পারে- এ আশঙ্কা প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাম্প্রতিক বন্যায় অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অবকাঠামোগত ও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় দুর্যোগব্যবস্থাপনা অধিদফতর ও কেয়ারের নেতৃত্বে নিডস অ্যাসেসম্যান্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (নেএডাব্লিউজি) কাজ শুরু করেছে। তারা সমন্বিত অ্যাসেসম্যান্টের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পাশাপাশি এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে তাৎক্ষণিক ও মধ্যমেয়াদি প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি ক্রিসিন ব্লকাস, ইউনিসেফের শেলডন ইয়েট, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেভেলপম্যান্ট ডাইরেক্টর মাট ক্যানেল, ইউরোপিয়ান কমিশনের ইসাবেলা ডি হাডট ও স্টার্ট ফান্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সাজিদ রায়হান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর