বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নাম জড়িয়ে ‘মানহানি’র অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিল ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন-আরসিবিসি, তা খারিজ করে দিয়েছেন সে দেশের আদালত। ৩০ জুন ফিলিপাইনের আদালতে ওই রায় হওয়ার পর সেই নথিপত্র বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে এসেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে। অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও হদিস মেলেনি। চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আরসিবিসি এবং এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। কী ধরনের অপরাধ হচ্ছে জেনেও অ্যাকাউন্ট খোলা, বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর এবং পরে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়গুলো ঘটতে দিয়েছেন। বাংলাদেশ মামলা করার দুই দিনের মাথায় ৬ মার্চ ফিলিপাইনের সিভিল কোর্টে আরসিবিসি পাল্টা ওই মানহানি মামলা করে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ কোটি পেসো (১৯ লাখ ডলার) দাবি করা হয় সেখানে।
আরসিবিসির মামলার এজাহারে বলা হয়, টাকা আদায় করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিরাট এক ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, সেজন্য তারা আরসিবিসির সুনাম ক্ষুণ্ন করতে ভাবমূর্তি নষ্টে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু যে টাকার জন্য এটা তারা করছেন, তা কখনই আরসিবিসির কাছে ছিল না, ওই টাকার দায়ও আরসিবিসির নয়। আরসিবিসি মামলা করার পর আইনি লড়াইয়ের জন্য ম্যানিলার বারনাস ল অফিসকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর ফিলিপাইনের আদালত আরসিবিসির পক্ষে সিদ্ধান্ত দিলে বাংলাদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। সেই ধারাবাহিকতায় ৩০ জুন আরসিবিসির মানহানি মামলা খারিজ করে দেন ফিলিপাইনের আদালত।
