সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

শিলংয়ের মাটিতে শায়িত শহীদ ৫২ বীর মুক্তিযোদ্ধা

স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির দাবি

মুহাম্মদ সেলিম, ভারত থেকে ফিরে

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের তীর্থভূমির অন্যতম ভারতের মেঘালয় রাজ্য। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই মুক্তিকামী মানুষের পাশে ছিলেন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মেঘালয়ের লোকজন। ওই শিলংয়ের পুলিশবাজারের ‘শিলং মুসলিম কবরস্থান’ মাটিতে শায়িত রয়েছেন শহীদ ৫২ বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও শায়িত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শহীদ ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির দাবি জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

আসামের গৌহাটির বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহকারী হাইকমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর বলেন, ‘শিলংয়ের মাটিতে নাম না জানা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির জন্য আমরা একটা প্রস্তাব দেব সরকারের কাছে। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এখানে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি হবে।’

শিলংয়ের মাটিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দাফনের তদারকি করেন আসামের প্রবীণ ফটোসাংবাদিক আহমেদ হোসেন। মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য ভূমিকা রাখায় আহমেদ হোসেন, তার ভাই আফজাল হোসেন ও বোন আশরাফি বেগমকে ২০১২ সালে সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ সরকার। শিলংয়ের মাটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের দাফনের বর্ণনা দিয়ে আহমেদ হোসেন বলেন, ‘১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে আমাদের টিমের সাংবাদিক নীলকমল গভীর রাতে ফোন দেন। তিনি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। তাকে মাটি দিতে হবে। প্রত্যুত্তরে আমি বললাম, কোনো সমস্যা নেই। পুলিশবাজারে আমার পূর্বপুরুষরা একটি মসজিদ তৈরি করেছেন। বংশপরম্পরায় আমরা ওই মসজিদের খাদেম। মসজিদের ইমাম সাহেবকে বলে দেব তিনিই সব ব্যবস্থা করবেন। পরে ওই মুক্তিযোদ্ধার লাশ নিয়ে মসজিদে গেলাম। মসজিদে নিয়ে লাশ খুলে অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম ১২-১৩ বছরের একটা ছেলে বুকে গুলি লেগে মারা গেছে। আমি এত কষ্ট পেয়েছিলাম যে সেটা বলার নয়। আমরা পাঁচ-সাতজন মিলে তাকে মাটি দিয়েছিলাম। এভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি, আমার ভাই, আমরা মিলে ৫২ জন শহীদকে শিলংয়ের মাটিতে দাফন করেছি, যাদের কারও পরিচয় আমরা আজও জানতে পারিনি।’ জানা যায়, আসামের শিলংয়ের পুলিশবাজার মসজিদের পাশেই অবস্থিত ‘শিলং মুসলিম কবরস্থান’। এ মসজিদের বংশপরম্পরায় খাদেমের দায়িত্ব পালন করে আসছেন আহমেদ হোসেন ও তাদের পরিবার। ফটোসাংবাদিক হিসেবে আহমেদ হোসেন মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালের আগস্টে নাম না জানা এক মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনের মধ্য দিয়ে শিলং মুসলিম কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের দাফন কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ডিসেম্বর পর্যন্ত একে একে ৫২ জনের লাশ দাফন করা হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও শহীদ ওই মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় জানা যায়নি। শহীদদের স্মরণে সেখানে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ পর্যন্ত হয়নি।

সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত মেঘালয়ে সফর করেছে বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রতিনিধি দল। ওই প্রতিনিধি দলের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম বলেন, ‘মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে ৫২ নাম না জানা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করা হয়েছে তা আমাদের জানা ছিল না। ওই সফরে গিয়ে প্রথমবারের মতো এ তথ্য জানলাম। এত দিন পর তাদের লাশ দেশে আনা সম্ভব নয়। তাই আমাদের দাবি থাকবে, মুক্তিযোদ্ধাদের দাফন করা কবরস্থানে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হোক।’

সর্বশেষ খবর