মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

চিরনিদ্রায় শায়িত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি

চিরনিদ্রায় শায়িত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার নামাজে জানাজা গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার লাশে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জনগণের ফুল ও অশ্রুসজল ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই ছেলের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও গাইবান্ধা-৫ আসনের সাতবারের এমপি অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গার্ড অব অনার প্রদানের পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। তিনি দশম সংসদসহ চলতি একাদশ সংসদে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এ ছাড়া ১৯৯০ সালে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। এর আগে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ফজলে রাব্বি মিয়ার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বেলা পৌনে ১১টায়। পরে হেলিকপ্টার যোগে লাশ নিজ জেলা গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভরতখালী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ তার নিজ গ্রাম গটিয়ায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রথম জানাজার আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ফজলে রাব্বি মিয়ার লাশের প্রতি সম্মান জানিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। জানাজার আগে মরহুমের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জানাজায় ইমামতি করেন সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের ইমাম আবু সালেহ মো. সলিমউল্লাহ। জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল  মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম  রেজাউল করিম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, সংসদ সদস্য, মরহুমের পরিবারের সদস্যরা এবং জ্যেষ্ঠ ও তরুণ আইনজীবীরা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। জানাজার পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের পক্ষে হুইপ ইকবালুর রহিম ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সংসদ সচিবালয়ের পক্ষে সচিব কে এম আবদুস সালাম এবং আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ফজলে রাব্বি মিয়ার লাশ গ্রহণ করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলম। সেখান থেকে মরহুমের লাশ সরাসরি নিয়ে আসা হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। জানাজার পর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টার যোগে ফজলে রাব্বির লাশ তার নিজ জেলা গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভরতখালী উচ্চবিদ্যালয়ে মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মরহুমের লাশ সেখানে পৌঁছলে এক বেদনাবিধুর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্বজনসহ জানাজায় কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ফজলে রাব্বি মিয়া গত ২২ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর