মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

সেপ্টেম্বরে জেলা পরিষদ নির্বাচন

সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকার অগ্রগতি জানাতে ডিসিদের চিঠি, দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

উবায়দুল্লাহ বাদল

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট জেলা পরিষদের দ্রুত নির্বাচন চায় স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত এপ্রিলে জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তিন মাস আগে দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে চিঠি দিলেও এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি তারা। গত মঙ্গলবার আবারও নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি দেশের ৬১ জেলার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সীমানা নির্ধারণের অগ্রগতি জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমানা নির্ধারণের কাজ আগামী আগস্টেই শেষ হবে। এরপর আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতেই জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গত মঙ্গলবার নিজ দফতরে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা জেলা পরিষদের আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করেছি। সংশোধিত আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদের সীমানা নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত জেলা পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে ইসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো সীমানা নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন হয়নি। আশা করছি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের সংশোধিত আইন অনুযায়ী পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১৭ এপ্রিল থেকে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে রয়েছেন সরকার কর্তৃক মনোনীত প্রশাসকরা। আইন অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগের পর ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সে অনুযায়ী আগামী ১৮ অক্টোবরের মধ্যে জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল ইসি সচিবকে পাঠানো স্থানীয় সরকার বিভাগের এক চিঠিতে বলা হয়েছে- জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ এর ধারা ৪ এর উপ-ধারা (১) অনুযায়ী জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১২ অনুযায়ী সংশোধিত জেলা পরিষদসমূহের সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য সংখ্যা এবং সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য সংখ্যা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদসমূহের সব ওয়ার্ডের সীমা পুনর্নির্ধারণপূর্বক চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করা হয়েছে।  জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ এর ধারা ১৯ (খ) অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, জেলা পরিষদ আইন (সংশোধন-২০২২) অনুসরণে জেলা পরিষদের পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। একই সময়ে ডিসিদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ বলেছে- জেলা পরিষদগুলোর সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য সংখ্যা এবং সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য সংখ্যা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদের সব ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন। জেলা পরিষদ (ওয়ার্ডের সীমা নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী জেলা ডেপুটি কমিশনার সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের ‘সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা’ এবং তার মনোনীত উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার অথবা এডিশনাল ডেপুটি কমিশনার সহকারী সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এমতাবস্থায়, জেলা পরিষদ (ওয়ার্ডের সীমা নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৪, ৫ ও ৬ অনুসরণে যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের ওয়ার্ডের সীমা পুনর্নির্ধারণ করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে এ বিভাগকে অবহিত করতে হবে। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানায়নি ইসি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (জেলা পরিষদ) মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী বলেন, ‘জেলা পরিষদের নির্বাচন করতে ইসিকে আমরা চিঠি দিয়েছি। তবে কিছু কিছু জেলার সীমানা নির্ধারণের কাজ এখনো বাকি রয়েছে। গত মঙ্গলবারও সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণসহ বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি জানাতে তাগিদ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি এ মাসেই তা সম্পন্ন হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানাবে। তার পরই মূলত নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে নির্বাচন কমিশন।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার গতকাল বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠি আমরা পেয়েছি। এখনো পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়নি। এ কাজগুলো সম্পন্ন হলেই আমরা নির্বাচনের উদ্যোগ নেব। মূলত নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে যতগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর সদস্যরাই জেলা পরিষদ সদস্যদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। অর্থাৎ সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং কাউন্সিলররা বা সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করতেন। কিন্তু সংশোধিত আইনে জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলার সংখ্যার সমান। আর নারী সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা চেয়ারম্যানদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ একেক জেলা পরিষদের সদস্যের সংখ্যা হবে একেক রকম, সংশোধনের আগে যেটা ২১ জন নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল। আগে জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তী নির্বাচন না হওয়ার পর্যন্ত পূর্বের পরিষদকেই দায়িত্ব পালন করার কথা বলা ছিল আইনে। কিন্তু বর্তমান আইনে পরিষদের মেয়াদ পূর্ণ হলে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দেবে। প্রসঙ্গত, এরশাদ আমলে গঠিত জেলা পরিষদে সংসদ সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নতুন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জেলা পরিষদ পরিচালনা করে। আওয়ামী লীগ নেতারাই মূলত প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর। সে সময় তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলায় নির্বাচন হয়। নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা শপথ নেন ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি আর সদস্যরা শপথ নেন ১৮ জানুয়ারি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর