বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বুলবুলের বাড়িতে শোকের মাতম

শাহজালালে ছাত্র হত্যা মামলায় আটক ৩, অবরোধ বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও নরসিংদী প্রতিনিধি

বুলবুলের বাড়িতে শোকের মাতম

বুলবুল নিহতের ঘটনায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা গতকাল মানববন্ধন করেন। নরসিংদীর বাড়িতে স্বজনদের আর্তনাদ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ছুরিকাঘাতে নিহত বুলবুল আহমেদের নরসিংদীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বুকের ধন ছেলেকে হারিয়ে বুলবুলের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বুলবুলের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন স্বজন, এলাকাবাসী ও বন্ধুরা।

এদিকে বুলবুল খুনের ঘটনায় শাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীদের আসামি করে মামলা করেছেন। পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন।

বুলবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার মৃত উহাব মিয়ার ছেলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বুলবুল ছিলেন সবার ছোট। তিনি ২০১৮ সালে নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন। তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন। সোমবার সন্ধ্যায় বুলবুল নিহতের খবর বাড়িতে এলে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আদরের ছেলেকে হারিয়ে মা ইয়াসমিন বিলাপ করছিলেন। তিনি বলেন, আমার সুখ ও শেষ সম্বল ছেলেটাকে মেরে ফেলল। আমি এর বিচার চাই। নিহতের বোন সোহাগী বলেন, আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। নিহতের সহপাঠী হৃদয় বলেন, বুলবুল খুবই মেধাবী ছিল। আমরা বন্ধু হত্যার বিচার চাই। শাবিপ্রবির নরসিংদী জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসের ভিতরে সহপাঠীর এমন নির্মম মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীদের আসামি করে জালালাবাদ থানায় মামলা করেছেন। বুকের বামপাশে ছুরিকাঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণে বুলবুলের মৃত্যু হয়েছে বলে রেজিস্ট্রার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডে লিখিত অভিযোগে রেজিস্ট্রার উল্লেখ করেন, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বুলবুল আহমদ বন্ধুদের নিয়ে ক্যাম্পাসের গাজীকালুর টিলা নামক স্থানে বেড়াতে গিয়ে একাধিক দুষ্কৃতকারীর কবলে পড়েন। অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে আহত হয় সে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও পরে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর খুনিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। গতকাল বিকাল পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। বুলবুল খুনের খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাতেই তারা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে ফের জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টিতে ভিজে তারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। শিক্ষার্থীরা বুলবুলের খুনিদের শনাক্ত করে গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ চার দফা দাবি জানান। প্রসঙ্গত, গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পেছনে গাজীকালুর টিলা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বুলবুলকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সর্বশেষ খবর