বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগ নেতার পিএ হতে না চাওয়ায় রাতভর নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

ব্যক্তিগত সহকারীর (পিএ) চাকরি করতে না চাওয়ায় রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি এক কলেজছাত্রকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে ৫০ হাজার টাকা চুরির স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে ওই ছাত্রকে। তার এ স্বীকারোক্তি ভিডিও ধারণ করে রাখা হয়েছে।

শুক্রবার গভীর রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুন্নবী হোস্টেলে এ ঘটনা ঘটে। এ হোস্টেলেই থাকেন ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন অমি। নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রের নাম মিলন হোসেন (১৯)। পুঠিয়া উপজেলার শিবপুরহাটে তার বাড়ি। বাবার নাম মো. আলমগীর। মিলন এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

নির্যাতনের শিকার হয়ে রবিবার থেকে মিলন পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তার বাবা আলমগীর এ ব্যাপারে গতকাল সকালে পুঠিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তদন্ত করে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আলমগীর জানান, অমির পিএ হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বৃহস্পতিবার তাঁর ছেলে মিলনকে কাজী নুরুন্নবী হোস্টেলে নিয়ে যান পুঠিয়া ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। রাতে ওই হোস্টেলে মদ্যপান ও উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ দেখে মিলন সকালে বাড়ি ফিরে যান। জানিয়ে দেন, তিনি চাকরি করবেন না। কিন্তু যারা মিলনকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের বারবার ফোন করতে থাকেন অমি। শুক্রবার রাতে আবার মিলনকে ওই হোস্টেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে অমি বলেন, মিলন হোস্টেল থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে গেছেন। এ টাকা তাকে দিতে হবে। মিলন টাকা চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তখন অমিসহ ১০-১২ জন মিলনকে ঘুসি মারতে থাকেন। পেটানো হয় ব্যাট দিয়ে। রাতভর এমন নির্যাতন চলতে থাকে। একপর্যায়ে বালিশের নিচ থেকে অস্ত্র বের করে মিলনকে দেখানো হয়। তার পরও মিলন চুরির অভিযোগ অস্বীকার করতে থাকলে বেল্ট খুলে তার গলায় পেঁচানো হয়। অমি তাকে ভয় দেখিয়ে বলেন, তোকে মেরে ফেললে কেউ দেখবে না। প্রাণে বাঁচতে চাইলে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার কর। প্রাণ বাঁচাতে মিলন স্বীকারোক্তি দেন। তখন তার কথা ভিডিও করা হয়। এরপর ভোর ৪টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অমি তাকে ভয় দেখিয়ে বলেন, কেউ জিজ্ঞেস করলে মিলন যেন বলে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। শনিবার সকালে মিলন বাড়ি গিয়ে সে কথাই বলেন। তবে শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে পরদিন নির্যাতনের কথা জানান। এর পরই তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। মিলনের বাবা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেন। বিচার চান নির্যাতনকারীদের। অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন অমি বলেন, ‘চাকরি-বাকরি না। তাকে আনা হয়েছিল সে আমার সঙ্গে থাকবে। কাজটাজ করবে। রাতে ছিল। সকালে আমরা ঘুম থেকে ওঠার আগেই ও চলে গেছে। বালিশের নিচে এক ফ্রেন্ডের ৫০ হাজার টাকা ছিল। ওটা নিয়ে চলে যায়। তাই তাকে ডেকে আনা হয়। ছোট-ভাইয়েরা ছিল, চড়-থাপ্পড় দিয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, এসব আর কোরো না ভাইয়া। ছোট ভাইকে বড় ভাই হিসেবে যেভাবে শাসন করা হয়, সেটাই করা হয়েছে।’

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর