শিরোনাম
বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
ওসমানী হাসপাতাল

হাসপাতালে তুলকালাম রোগীদের ভোগান্তি

বহিরাগতদের হামলার অভিযোগে ধর্মঘটে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর বহিরাগতদের হামলা ও এক ইন্টার্ন নারী চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কলেজের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। ওসমানী হাসপাতালের জরুরি ও হৃদরোগ বিভাগ ছাড়া বাকি সব বিভাগে সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। গত সোমবার রাত ১০টা থেকে ধর্মঘট শুরু হয়। পরে রাত ২টায় গণমাধ্যমে তারা মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় গতকাল বেলা ২টা থেকে তারা পুনরায় ধর্মঘট শুরু করেন। হামলার ঘটনায় পুলিশ গতকাল পর্যন্ত দুজনকে আটক করেছে। হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফ ও মেডিকেল কলেজের পিএ-টু প্রিন্সিপাল ও সচিব মাহমুদুল রশিদ মামলা দুটি দায়ের করেন। এ ঘটনায় আটকরা হলেন- নগরীর মুন্সীপাড়ার মৃত রানা আহমদের ছেলে সাঈদ হাসান রাব্বি, কাজলশাহ এলাকার আবদুল হান্নানের ছেলে এহসান আহমদ। রাব্বী সিলেট মহানগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফের দায়ের করা মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ওই মামলায় হাসপাতালের একজন নারী ইন্টার্নের শ্লীলতাহানির অভিযোগ করা হয়েছে। মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন- দিব্য, আবদুল্লাহ, এহসান, মামুন, সাজন, সুজন ও সামী। এর মধ্যে আবদুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল খালিকের ভাতিজা। হামলার ঘটনায় মেডিকেল কলেজের পিএ-টু প্রিন্সিপাল মাহমুদুল রশিদের দায়ের করা মামলায়ও আবদুল্লাহকে আসামি করা হয়েছে।

জানা যায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী (ইন্টার্ন চিকিৎসক) ইমন আহমদের সঙ্গে গত রবিবার দুপুরে এক রোগীর দুই স্বজনের বাগবিতণ্ডা হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এ সময় ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়। ওই ঘটনার জের ধরে সোমবার রাত ৮টার দিকে ইমন আহমদ ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র নাথের ওপর কলেজের পেছনে হামলা চালানো হয়। আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন সহপাঠীরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাত ১০টার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। পরে আন্দোলনরতদের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মেডিকেল প্রশাসনের মামলা করাসহ পাঁচ দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে রাত ৩টার দিকে ধর্মঘট ও অবরোধ প্রত্যাহার করেন আন্দোলনরতরা। হামলাকারীদের গ্রেফতারে তারা মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বেলা ২টায় আন্দোলনরতদের সঙ্গে কলেজ, হাসপাতাল, পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতারা ফের বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ইন্টার্ন চিকিৎসকের দাবিগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয় এবং ইতোমধ্যে কলেজে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে হামলাকারী কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় বৈঠক শেষে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে বিকালে তারা কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তবে শুধু ইমার্জেন্সি ও হৃদরোগ বিভাগে সেবা অব্যাহত রাখবেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

 

সর্বশেষ খবর