বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
চুরি অনিয়মে নৈরাজ্য দুই মেডিকেলে

চমেক হাসপাতালে ট্রলি ধরলেই টাকা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ারে ভর্তি করা হয় রাঙ্গুনিয়া থেকে আনা রোগী হামিদুল হককে। ভর্তির পর পাশের রুমে নিতে হয় এক্স-রে করাতে। দরকার হয় হুইলচেয়ারের। রোগীর স্বজন হুইলচেয়ার নিতে চাইলেই বলা হয় ১০০ টাকা দিতে হবে। তখন বাধ্য হয়ে ১০০ টাকা দিয়ে ঠিক পাশের রুমে নিয়ে এক্স-রে করাতে হয়। রোগীর ছেলে সাইফুদ্দিন বলেন, এক রুম থেকে পাশের রুমে নেওয়া হয় এক্স-রে করাতে। সময় লেগেছে মাত্র ১০ মিনিট। রোগীকে শয্যায় আনার পরই দাবি করে ১০০ টাকা। বাধ্য হয়েই দিতে হয়। এটি কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে?

সার্জারি ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন ইরশাদ বলেন, ট্রলি করে অপারেশন কক্ষে নেওয়ার পর ওয়ার্ডবয় দাবি করল ১০০ টাকা। দিতে দেরি করলেই ধমক দেয়। এরপর বলল, ট্রলি ধরলেই টাকা দিতে হবে। কোথাও অভিযোগ দিয়ে লাভ হবে না। হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরা তাদের কাছে জিম্মি। তারা এখানে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, বিষয়টা নিয়ে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় আছি। হাসপাতালের নিজস্ব জনবল না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা রোগীদের সঙ্গে এমন আচরণ করছে। তবে ট্রলি ও হুইলচেয়ার ব্যবহার নিয়ে রোগী কীভাবে ভালো সেবা পায়, তা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার বিষয়টা একটা শৃঙ্খলায় আনা হয়েছে। ট্রলি-হুইলচেয়ারের বিষয়টাও শৃঙ্খলায় আনা হবে।   

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে রোগী ভর্তি হওয়ার পর রোগীদের রোগ নির্ণয়, প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং ওয়ার্ড স্থানান্তরসহ নানা কাজে ট্রলি ও হুইলচেয়ার অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। কিন্তু ট্রলি ও হুইলচেয়ারগুলো থাকে কিছু ওয়ার্ডবয়ের নিয়ন্ত্রণে। রোগীর এসব জিনিসের  দরকার হলে তাদের কাছে গিয়ে বলতে হয়। তখন তারা ট্রলি-হুইলচেয়ার দেওয়ার সময়ই বলে দেয় টাকার কথা। কাজ শেষে ন্যূনতম ১০০ টাকাই দিতে হয়। টাকা দিতে দেরি বা কম দিতে চাইলে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। অনেক সময় রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই এ সমস্যার কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।   

জানা যায়, চমেক হাসপাতালে বর্তমানে অনুমোদিত শয্যা আছে ১ হাজার ৩১৩টি। কিন্তু হাসপাতালে প্রতিনিয়তই ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার রোগী ভর্তি থাকে। তাছাড়া বহির্বিভাগে দৈনিক প্রায় ৩ হাজার রোগী সেবা গ্রহণ করে। কিন্তু এখানে রোগীর তুলনায় শয্যা ও জনবল অনেক কম। তবে গত ২২ মে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১ হাজার ৩১৩ থেকে ২ হাজার ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।

সর্বশেষ খবর