বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন

কমানো যাচ্ছে না ভোজ্য তেলের দাম

৮৭ টাকা ডলারের এলসি নিষ্পত্তি ১০৭ টাকায়, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে ৬০ শতাংশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমলেও ডলারের উচ্চ রেটের কারণে দেশে পণ্যটির দাম কমানো যাচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাজারদর ও ডলার রেট পর্যালোচনা করে দেখেছে যে, আমদানিকারকরা দুই মাস আগে যে রেটে ঋণপত্র খুলেছিলেন (এলসি ওপেন) এখন তা নিষ্পত্তি (এলসি সেটেলম্যান্ট) করতে গিয়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে প্রায় ২০ টাকা বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। উপরন্তু জ্বালানির দাম বাড়ায় পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। এর ফলে ব্যবসায়ীদের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দুটি কারণে এই মুহূর্তে ভোজ্য তেলের দাম কমানো যাচ্ছে না। প্রথমত, ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে এলসি নিষ্পত্তিতে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। দ্বিতীয়ত, জ্বালানির দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এটিও ভোজ্য তেলের দাম কমানোর ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোজ্য তেলের দাম নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব। সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে গত সপ্তাহে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি পাঠায় ভোজ্য তেল পরিশোধন ও বিপণন কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারস অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিভিওআরভিএমএ)। প্রস্তাবে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৮০ টাকা, বোতলজাত লিটারপ্রতি ২০৫ টাকা এবং ৫ লিটারের  বোতলের দাম ৯৬০ টাকা করার কথা বলা হয়। সূত্র জানায়, বিভিওআরভিএমএ’র প্রস্তাবের বিপরীতে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ভোজ্য তেলের আন্তর্জাতিক বাজারদর, ডলার রেটসহ বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়গুলো তুলে ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। ওই প্রতিবেদনটি গতকাল পর্যালোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ট্যারিফ কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ৩০ থেকে ৩৫ হ্রাস পেলেও আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধে ব্যবহৃত বৈদেশিক মুদ্রা মার্কিন ডলারের দাম কার্ব মার্কেটে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য পরিবহন ব্যয় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই পণ্য পরিবহনে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য যে হারে হ্রাস পেয়েছে, স্থানীয় বাজারে সে হারে মূল্য হ্রাস পাবে না বলে প্রতীয়মান।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ট্যারিফ কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী কয়েক মাস আগে ভোজ্য তেলের আন্তর্জাতিক বাজারদর ছিল বেশি। তখন প্রতি মেট্রিক টন সয়াবিনের দাম বেড়ে প্রায় ১ হাজার ৯০০ ডলারে ওঠে। এখন দাম কমেছে।

গত ৩ আগস্টের তথ্য অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে ১ মেট্রিক টন সয়াবিনের দাম কমে ১ হাজার ৪০৫ ডলারে নেমে আসে। একই সঙ্গে পাম অয়েলের দাম কমে হয় ১ হাজার ২৭০ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুসারে দেশের বাজারেও সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম কমার কথা। কিন্তু ডলারের উচ্চ রেটের পাশাপাশি দেশের বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, দুই মাস আগে যখন আমদানিকারকরা ভোজ্য তেল আমদানির এলসি খোলেন, তখন প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৫ থেকে ৮৭ টাকা। ওই এলসি এখন সেটেলম্যান্ট করার সময় প্রতি ডলারের বিপরীতে আমদানিকারকদের বাড়তি ২০ টাকা দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ ৮৭ টাকা ডলারে এলসি ওপেন করে এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে ১০৭ টাকা। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমলেও ডলারের উচ্চ রেটের কারণে সেই সুবিধা নেওয়া যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর