শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

লঘুচাপে তলিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন নিঝুমদ্বীপের হরিণ লোকালয়ে

প্রতিদিন ডেস্ক

লঘুচাপে তলিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন নিঝুমদ্বীপের হরিণ লোকালয়ে

লঘুচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে বিশ্বঐতিহ্যের সুন্দরবন। এ অবস্থায় সুন্দরবনের বাঘ, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর জীবন সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে পানির তোড়ে মারা পড়ছে অনেক প্রাণী। এদিকে নোয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নিঝুমদ্বীপের হরিণগুলো প্রাণের ভয়ে লোকালয়ে এসে পড়েছে। এ ছাড়া নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর এখন উত্তাল। কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিন দিন ধরে জোয়ারের পানিতে ভাসছে বরগুনার নিম্নাঞ্চল। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

বাগেরহাট : সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গত তিন দিনে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। সুন্দরবনের সবচেয়ে উঁচু এলাকা হিসেবে চিহ্নিত চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল ট্যুরিজম ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র গতকাল দুপুরের জোয়ারে ৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় গোটা সুন্দরবনে বাঘ, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। পানির তোড়ে মারা পড়ছে অনেক প্রাণী। সুন্দরবন বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনসহ ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গোটা সুন্দরবনে ৮৫টি পুকুরের উঁচু পাড়সহ বন বিভাগের অফিস ও টহল ফাঁড়ির উঁচু এলাকায় বন্যপ্রাণীরা আশ্রয় নিচ্ছে। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহম্মদ মহসিন হোসেন জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গোটা সুন্দরবনে ৮৫টি পুকুরের উঁচু পাড়সহ বন বিভাগের অফিস ও টহল ফাঁড়ির উঁচু এলাকায় বন্যপ্রাণীরা আশ্রয় নিচ্ছে।

নোয়াখালী : জেলার উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের প্রধান সড়কগুলো প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বসতবাড়িতে। আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে অতিরিক্ত পানির কারণে নিঝুমদ্বীপের হরিণগুলো লোকালয়ে চলে আসছে। এতে অনেক হরিণ ও হরিণশাবক জোয়ারের পানিতে ভেসে যাচ্ছে। লোকালয়ে আসার কারণে  কুকুরের কামড়ে অনেক হরিণ মারা যাচ্ছে। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘হরিণগুলো লোকালয়ে এসে পড়ায় কোনো সমস্যা নেই।’

কক্সবাজার : সকালে জোয়ারের পানি বাড়ায় কক্সবাজার সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সৈকতে বিশালাকৃতির ঢেউ আছড়ে পড়ছে। এতে গত তিন দিনে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, কলাতলীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। পর্যটকদের জন্য রাখা চেয়ারের জায়গা তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন মার্কেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে। লাবণী পয়েন্টের পুলিশ বক্সটি একেবারে ভেঙে গেছে। ঢেউয়ের তোড়ে সৈকতের বালিয়াড়ি ভেঙে পড়ায় পর্যটকদের বসার কিটকট বা ছাতা চেয়ারগুলো সৈকতের পাড়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এ নিয়ে পর্যটক ও স্থানীয়রা শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন। সৈকতে বসার জায়গা ও বিশালতা সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, সাগর উত্তাল থাকায় পর্যটকদের পানিতে নামতে নিরুৎসাহ করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে সৈকতের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

পিরোজপুর : জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও ২ থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত পানি উঠেছে। শারিকতলা, ডুমুরিতলা, কাউখালী, ইন্দুরকানি, ভাণ্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়ার বেশ কিছু ভাঙা বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকছে। ফলে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ইন্দুরকানির পাড়েরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান শাওন তালুকদার জানান, টানা তিন দিনের বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের ঘের, ফসলি জমিসহ ফসল ডুবে গেছে।

বরগুনা : বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বরগুনার সব নদীর পানি। গতকাল দুপুর পর্যন্ত পায়রা ও বিষখালীর পানি বিপৎসীমার ৩ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মাহতাব হোসেন জানান, তিন দিন ধরে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ছে। এতে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে বরইতলা-বাইনচটকি ফেরিঘাট।

 

 

সর্বশেষ খবর